বউ-পুলাপান বাড়িত অপেক্ষায় রইছে

‘সাত মাস আগে বাড়ি থেইক্যা কামে গেছি। এতদিন কারও লগেই দেহা নাই। ঈদের মধ্যে যদি না যাই, তাগর ঈদ অইব? বউ-পুলাপান অপেক্ষায় রইছে, আমি কহন বাড়িত যাই। আমি গেলেই তো তাগর ঈদ। হের লেগাই তো এত কষ্ট কইরা বাড়িত যাইতাছি।’
করোনার ঝুঁকি নিয়েও কেন বাড়ি যাচ্ছেন জানতে চাইলে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন আব্দুল আজিজ। তিনি টঙ্গীতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন। ঈদকে সামনে রেখে পথে পথে দুর্ভোগ আর করোনার ঝুঁকি নিয়েও ট্রাকের ওপর চেপে ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ এলাকার বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি।
শুধু আব্দুল আজিজই নয়, একই অবস্থা বাড়ি ফেরা হাজার হাজার মানুষের। ট্রাক, পিকআপ কিংবা মোটরসাইকেলযোগে যে যেভাবে পারছেন নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন।

করোনা মহামারির কারণে এবারের ঈদে গ্রামের বাড়িতে যেতে মানুষকে নিরুৎসাহিত করতে বন্ধ রাখা হয়েছে দূরপাল্লার পরিবহন। তবে থেমে থাকেনি মানুষ। পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাতে ভেঙে ভেঙে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুনে বাড়ি যেতে দেখা গেছে বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিক, ভাসমান ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে।
বুধবার (১২ মে) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের বাইপাস মোড়ে অবস্থান করে ঈদে বাড়ি ফেরার এমন চিত্র দেখা গেছে।
এ সময় কথা হয় ঢাকায় একটি ব্যাংকের এটিএম বুথের কেয়ারটেকার রজব আলীর সঙ্গে। দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফজরের নামাজ পড়েই রওনা হয়েছি জালামপুরের উদ্দেশ্যে। পথে ভেঙে ভেঙে আসতে হলো। ১৫ ঘণ্টা লাগলো ময়মনসিংহ আসতেই। বিকেল হয়ে গেল। সেই সঙ্গে বাড়তি ভাড়াতো আছেই। কী করবো নাতিরা আমার জন্য বসে আছে, কিছু নিয়ে যাব সেজন্য।

দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্পে কর্মরত এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ট্রাক, সিএনজি, বাস এগুলো দিয়ে ভেঙে ভেঙে আসলাম অনেক কষ্ট করে। এত মানুষ একসঙ্গে আসতেছে, তাহলে বাস চলতে সমস্যা কোথায়। বাসে যেখানে এক সিটে দুইজন বা একজন করে আসতো। এখন গাদাগাদি করে আসতে হচ্ছে।
ঝুঁকি নিয়ে কেন আসা? উত্তরে তিনি বলেন, সারাবছর বাড়ির বাইরে থাকি। এই সময়টাতে বাবা-মাসহ স্বজনরা আশায় থাকেন ছেলে বাড়ি আসবে। যেহেতু কয়েকটা দিন ছুটি পেয়েছি সেজন্য বাড়ি যাচ্ছি।
এদিকে যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে থেমে থেমে যান চলাচল করতে দেখা গেছে। বাইপাস মোড়েই যাত্রীদের যানবাহন থেকে নামিয়ে দেওয়ার কারণে হেঁটে যেতে হচ্ছে পরবর্তী গন্তব্যে। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা সড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন।
উবায়দুল হক/আরএআর