পিপরুলের বাঁশভাগ গ্রাম যেন নৌকা তৈরির কারখানা

এখনো আসেনি ভরা বর্ষা। তবে নদীমাতৃক বাংলাদেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে আস্তে আস্তে বাড়ছে পানি। বর্ষা আর পানির সঙ্গে তেমনই সখ্য গড়ে ওঠে নলডাঙ্গার জেলেদের। তাই তো নৌকা তৈরি ও মেরামতকাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। বছরের অন্য মাসগুলোয় তারা যেমনই কাটান, যে পেশাতেই থাকেন, বর্ষার আগমনের অপেক্ষায় থাকেন তারা সব সময়।
গত কয়েক দিনের বর্ষণে পানি প্রবেশ করেছে নদ-নদীতে। বারনই নদে মাছ ধরা, এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা হয় নৌকা। নদে নতুন পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে বিল অঞ্চলে ধুম পড়েছে নতুন নৌকা বানানোর তোড়জোড়। নৌকার পাশাপাশি জেলে সম্প্রদায়ের লোকেরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন জাল বুননের কাজে। কয়েক দিন পরেই নতুন নৌকা আর জাল দিয়ে মাছ ধরতে নামবেন জেলেরা। তাই তো নৌকাই যেন জেলেদের আশা-আকাঙ্ক্ষা আর সংসার চালানোর একমাত্র হাতিয়ার।
সরেজমিন নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুলের বাঁশভাগ গ্রামে নৌকা তৈরির কারখানাগুলোয় দেখা যায় নৌকা তৈরির ধুম। কারিগররা তৈরি করছেন বিভিন্ন আকারের নৌকা। এসব নৌকা তৈরি হচ্ছে শিমুল, কাঁঠাল, মেহগনি, কালেক্টর, কড়ই, গোবরা জিবা, আম, কদম, বাটুলসহ আরও অন্যান্য গাছের কাঠ দিয়ে। ঠুকঠুক শব্দে এগিয়ে চলছে নৌকা তৈরির কাজ।
নলডাঙ্গা উপজেলার হাপানিয়া গ্রামের নৌকা তৈরির কারিগর এনামুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বর্ষা মৌসুমের অপেক্ষায় থাকি। কেননা, বর্ষা মৌসুমের সময় আমাদের কাজের অনেক চাপ থাকে। এখন ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে জেলেদের মাছ ধরার নৌকা বানানোর কাজে। চাহিদা মোতাবেক ছোট-বড় বিভিন্ন রকম নৌকা বানানো হয়। নৌকাগুলো পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
কাঠের বেপারী আলী মদ্দিন সরদার বলেন, বছরের অন্য মাসগুলো ব্যবসা খুব খারাপ চলে। কারিগররাও খুব কষ্টে সময় পার করেন। যদিও বর্ষার সময় এখনো আসেনি। তারপরও বর্ষার পানিতে বারনই নদ ভরে গিয়েছে। আমরা বিভিন্ন বাগান থেকে গাছ কিনে এনে মিলে সাইজ করি। একটা নৌকা তৈরির জন্য কারিগরদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয় ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন এলাকার লোকজন নৌকা কিনতে আসছেন।
বাঁশভাগ গ্রামের আসাদুল ইসলাম বলেন, আমি ছোট থেকেই নৌকা তৈরির কাজে জড়িত। নৌকা তৈরি করি পাশাপাশি নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি।
নৌকা কিনতে আসা ক্রেতা আরিফ বলেন, প্রতি বর্ষাতেই আমরা নৌকা কিনতে আসি। এখান থেকে নৌকা কিনে নিয়ে যাই। বর্ষা মৌসুমে আমরা এই নৌকা দিয়ে মাছ শিকার থেকে শুরু করে পারাপার হই। এখানকার নৌকাগুলো অনেক ভালো এবং মজবুত। তাই এখান থেকে নৌকা ক্রয় করি।
মাধনগরের মৃধাপাড়া এলাকার আতাউর খাঁ বলেন, আগে ভালো ভালো কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি করা হতো। এখন কড়ই, বাবলা দিয়েই বেশি নৌকা তৈরি করা হয়। নৌকা তৈরিতে কাঠ ছাড়াও মাটিয়া তৈল, আলকাতরা, তারকাঁটা, গজাল, পাতাম ইত্যাদি লাগে, যা নৌকাকে দীর্ঘদিন টেকসই রাখে।
শহীদ নজমুল হক সরকারি কলেজের অধ্যাপক মামুনুর রশিদ তোতা বলেন, বর্ষার শুরুতে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করেন মিস্ত্রিরা। একসময় পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল নলডাঙ্গার বুক চিরে বয়ে চলা বারনই নদ। তবে কয়েক বছর থেকে সেই দৃশ্য তেমন আর চোখে পড়ে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অল্প অল্প করে বারনই নদে পানি ঢুকছে। তবে বর্ষা আসতে এখনো দেরি আছে। বর্ষা মৌসুমে এলাকার লোকজন নৌকা দিয়ে মাছ শিকার ও পারাপার হয়ে থাকে।
তাপস কুমার/এনএ