চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব, আক্রান্ত বেশি শিশুরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঘন কুয়াশা ঘনিয়ে শীত আসতে না আসতেই দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, টনসিলাইটিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস, ব্রংকাইটিস, সাইনোসাইটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বয়স্ক লোকজন ও শিশুরা; তবে শিশুদের আক্রান্তের হার বেশি।
গত সপ্তাহ থেকে হঠাৎ করেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে শিশু রোগীর ভিড় বেড়ে গেছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, টনসিলাইটিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস, ব্রংকাইটিস, সাইনোসাইটিসসহ নানা রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়েছে। ধারণক্ষমতার বেশি রোগী থাকায় নার্সরাও চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
সোমবার (০২ ডিসেম্বর) সরজমিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে এবং হাসপাতাল সূত্র জানা যায়, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ১১ জন শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতলে ভর্তি হয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৪০ জন ছেলে শিশু, ১৯ জন মেয়ে শিশু, ২ জন পুরুষ ও ০৯ জন মহিলাসহ ৭০ জন চিকিৎসাধীন আছে।
চাঁপাইনববাগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ মাওরিপাড়ার বাসিন্দা সুমি জানান, গতকাল রাতে তার শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। চিকিৎসা সেবা ভালোই চলছে। এখন আমার বাচ্চা আল্লাহর রহমতে ভালোই আছে।
গোমস্তাপুর ইউনিয়নের চৌডোলার বাসিন্দা মো: পরিবত ইসলাম বলেন, আমার বাচ্চাকে নিয়ে এখানে তিনদিন ধরে ভর্তি আছি। আমার বাচ্চাকে ভালো চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। আজকে আমাদের ছুটি দেওয়া হবে।
শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের বাসিন্দা তারাপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরেফা বেগম বলন, আমার ছেলের শরীর ভালো ছিল না। তাই ভর্তি হয়েছিলাম। আল্লাহর রহমতে এখন আমার ছেলে সুস্থ। আজকে আমদেরকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক ডা. মাহফুজ রায়হান বলেন, “গত ৪-৫ বছর ধরে শীতকালীন রোটা ভাইরাসের প্রকোপ অত্যাধিক হারে বেড়ে গেছে। প্রতি বছরই এ সময় ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ে। প্রতিদিন ৫০ এর অধিক শিশু আমাদের ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছে এবং তারা সেবা নিচ্ছে। এর বাইরে শতাধিক শিশু জরুরী বিভাগ ও অনান্য জায়গা থেকে সেবা নিচ্ছে। পুরো জেলায় রোটা ভাইরাস আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে।
তিনি আরোও বলেন, “ডায়রিয়ার লক্ষণগুলো প্রথমে বমি দিয়ে শুরু হচ্ছে এবং পরবর্তীতে পাতলা পায়খানাও শুরু হচ্ছে। প্রাথমিক চিকিৎসায় আমরা ওরস্যালাইন ও ঘন ঘন তরল খাবার খাওয়ানোর পরমর্শ দিচ্ছি।”
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে আরোও বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি ৩ বা ৪ দিনের ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুরা আমাদের এখানে ভর্তি হওয়ার আগে বিভিন্ন রকমের চার বা পাঁচ ধরনের এন্টিবায়েটিক খেয়ে আসছে, যেগুলোর আসলে প্রয়োজন ছিল না। প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত এন্টিবায়েটিক যেমন বাচ্চার জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে তেমনি ভবিষ্যতে এন্টিবায়েটিকের কার্যকারিতাও নষ্ট করে দিতে পারে। আর ভাইরাল অসুখ নির্দিষ্ট সময় পর এমনি ভালো হয়ে যাবে তবে ততদিন পর্যন্ত শিশুকে পানি ও তরল খাবার খাওয়ানো , পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করানো প্রধান চিকিৎসা। আর যখন বাচ্চা বেশি দুর্বল হয়ে পড়বে তার প্রশাব কমে যাবে, পানিশূণ্যতার লক্ষণ দেখা দিবে তখন হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।
মো: আশিক আলী/এসএমডব্লিউ