ফল না পেয়ে ভিয়েতনামি নারকেল বাগান কাটলেন চাষি

কাঙ্ক্ষিত ফল না পেয়ে ভিয়েতনামি জাতের নারকেল বাগান কেটে ফেলেছেন বজলুল হক নামে এক চাষি। তার বাগানে ১৮৯টি নারকেল গাছ ছিল। বাগানে তিন বছরে ফল আসার কথা থাকলেও সাত বছরে তিন ভাগের দুই ভাগ গাছেও আসেনি। এক ভাগ গাছে ফল আসলেও তা কাঙ্ক্ষিত না। এমন অবস্থায় গত রোববার (৮ ডিসেম্বর) বাগানের ১২৪টি গাছ কেটে ফেলেছেন তিনি।
সরেজমিনে বুধবার (১১ ডিসেম্বর) রাজশাহী নগরীর মোহনপুর এলাকায় বজলুল হকের নারকেল বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, লাগানো গাছের সারির মধ্যে একটি বা দুটি বাদ দিয়ে সব নারকেল গাছ কাটা হয়েছে। পুরো বাগানজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে নারকেল গাছের অবশিষ্ট অংশ। বাগানের উত্তরপাশে সফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নারকেল গাছগুলো লাকড়ি করার জন্য কুড়াল দিয়ে বিচ্ছিন্ন করছেন। আর এলাকার মানুষ কেটে ফেলা নারকেল গাছের অংশগুলো নিয়ে যাচ্ছে লাকড়ি করার জন্য।
বাগান মালিক বজলুল হকের ছেলে আতাউর রহমান বলেন, বাগানে ১৮৯টি গাছ লাগানো ছিল। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফলন না পাওয়ায় ১২৪টি নারকেল গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে অবশিষ্ট রয়েছে ৫৬টি। এগুলো যে কোনো সময় কেটে ফেলা হবে। বাগান বাবদ দীর্ঘ সাত বছরে নিজেদের পরিশ্রম বাদে প্রায় ২২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। যার সবগুলো এখন লোকসানের খাতায়। লোকসানের দিকে না তাকিয়ে গলার কাটা বাগান কেটে ফেলা হচ্ছে।
তাদের দাবি- প্রতি বছর সার, সেচ, কীটনাশক বাবাদ তিন লাখ টাকা খরচ হয়। যত দিন বাগান থাকবে লোকসানের পরিমাণ তত বাড়বে। তাই তারা গাছগুলো কেটে ফেলছেন।
আতাউর রহমান জানান, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রাজশাহী হর্টিকালচার সেন্টার থেকে প্রতিটি ৫০০ টাকা দরে ভিয়েতনামি জাতের নারকেল গাছের চারা কিনে বাগান করা হয়। তিন বিঘা জমিতে ১৮৯টি নারকেল গাছের চারা রোপণ করে বাগান করেছিলেন তারা। রোপণের কয়েক দিনের মাথায় ৩০টি নারকেল গাছ মারা যায়। এরপর তারা একই দামে ৩০টি নারকেল গাছ কিনে আবার রোপণ করেন। সেই সময় হর্টিকালচার সেন্টার থেকে বজলুর রহমানকে জানায়, গাছে তিন বছরে ডাব আসবে। এই কথায় তিনি বাগান করেছিলেন। কিন্তু গাছ রোপণের সাত বছরেও ঠিকমতো ফল আসেনি তার গাছে। এতে তিনি হতাশ।
আতাউর রহমান দাবি করেন, রাজশাহী হর্টিকালচার সেন্টার থেকে ভিয়েতনামি জাতের বলে যে নারকেল গাছ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে অন্য জাতের গাছ বেশি ছিল। ফলে কোনোটি ঘাট জাতের আবার কোনোটি লম্বা জাতের। কিন্তু গাছগুলোতে কাঙ্ক্ষিত ডাব আসেনি। কোনো গাছে এ বছর ডাব আসলে পরের বছরে আর নেই। তিন বছরের মাথায় ডাব আসার কথা থাকলেও বেশিরভাগ গাছে সাত বছরেও একটিও ডাব আসেনি। এই বাগান রাখলে প্রতি বছর খরচ বাড়ছে। তাই কেটে ফেলা হয়েছে। এখন গবাদি পশুর খাবারের জন্য ঘাস লাগানো হবে এই জমিতে।
এ বিষয়ে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সুজিৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, গাছগুলো কৃষকরা বিভিন্নভাবে কিনেছেন। আমরা বিভিন্ন সময় শুনেছি কোথাও কোথাও ফলন এসেছে। তবে বেশির ভাগ জায়গায় ফলন পাওয়া যায়নি। চাষিরা কাঙ্ক্ষিত ফল না পেয়ে এক ধরনের হতাশ।
বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যান তত্ত্ববিদ ছাইয়্যেদা দিল ছালিনেরর মুঠোফোনে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তাই এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শাহিনুল আশিক/আরএআর