২৫ দিন পর লাকিং মের মরদেহ পেল পরিবার

দুই পক্ষের টানাটানি আর নানা আইনি জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে দীর্ঘ ২৫ দিন পর বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের লাকিং মে চাকমার (১৫) মরদেহ। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। পরে সন্ধ্যায় রামুর কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ মহাশ্মশানে সমাহিত করা হয় লাকিং মে চাকমার মরদেহ।
এদিকে সকাল থেকে বসে থাকার পর মর্গের ফ্রিজের খরচ বাবদ ২৪ হাজার টাকা দিতে না পারায় দুই ঘণ্টা মরদেহ আটক রাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাবের পক্ষ থেকে ২৪ হাজার টাকা দেয়ার পর মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) অর্জুন চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেহেতু মেয়েটির বয়স ১৫ বছর সেহেতু তার ধর্মান্তরিত হওয়া ও বিয়ে দুটোই আইনগতভাবে অবৈধ। তাই তার মরদেহ বাবা লালা অং চাকমার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
লাকিং মে চাকমার বাবার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন আসামিদের গ্রেফতার এবং অপহরণ মামলাটি তদন্ত করার দাবি জানাই। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা লড়ে যাবো।
আদালত ও র্যাব সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর লাকিং মে চাকমাকে স্থানীয় কয়েকজন যুবক নিজ বাসা টেকনাফের দক্ষিণ শিলখালী চাকমাপাড়া থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে টেকনাফ থানায় মামলা করতে যান কিশোরীর বাবা লালা অং চাকমা। কিন্তু সেদিন পুলিশ মামলা গ্রহণ না করায় লালা অং চাকমা ফিরে আসেন। এরপর ১৭ জানুয়ারি কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এ একই এলাকার আতা উল্লাহ, মোহাম্মদ হামিদের ছেলে মোহাম্মদ ইসা (৩০) ও জাগির হোসেনের ছেলে মো. ইয়াসিনসহ (২২) অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দেন। পিবিআই দীর্ঘ ছয় মাস তদন্ত শেষে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষী ও বক্তব্যসহ প্রতিবেদন দাখিল করে। যাদের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে তারা কেউ এই ঘটনায় সঙ্গে জড়িত নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
কয়েকজন সাক্ষীর বরাত দিয়ে পিবিআইয়ের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কিশোরী লাকিং মে চাকমা নিজের ইচ্ছায় ঘর ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছেন। এরপর বহু জায়গায় খুঁজেছেন তার বাবা কিন্তু সন্ধান না পেয়ে এক প্রকার হাল ছেড়ে দেন। দীর্ঘ ১১ মাস পর গত ১০ ডিসেম্বর হঠাৎ কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই আব্দুল হালিম লাকিং মে চাকমার পরিবারকে ফোন দিয়ে প্রথম মেয়ের সন্ধান দেন। তবে জীবিত নয় মৃত।
প্রশাসনের কাছে যখন নিজের মেয়ের মরদেহ নেয়ার জন্য যান ততক্ষণে স্ত্রী দাবি করে দাফন করার জন্য আবেদন করেন আতা উল্লাহ। সেখান থেকে বলা হয়, তাদের মেয়ে ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং মেয়ের স্বামী আতা উল্লাহ তাকে দাফন করতে চান।
তারপর লালা অং চাকমা মেয়ের মরদেহ দাবি করে গত ১৫ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের আগস্ট মাসে জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেন। এর প্রেক্ষিতে আদালত র্যাবকে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বরেন। একই সঙ্গে প্রথমে তদন্ত করে মরদেহ হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত জানাতে বলা হয়।
আরএআর