‘বাবার মৃত্যুতে অনেক কষ্ট পেয়েছি, মরদেহ উঠাতে দেবো না’

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত বরগুনার রিয়াজুলের মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলন করতে দেয়নি স্বজনরা। তবে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হবে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার উরবুনিয়া নামক এলাকায় রিয়াজুলের কবর থেকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মরদেহ উত্তোলনে গেলে বাধা দেন স্বজনরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার দিন বিজয় মিছিলে ঢাকার আশুলিয়ায় নিহত হন রিয়াজুল। পরে এ ঘটনায় গত ২৪ নভেম্বর নিহত রিয়াজুলের ভাই আলম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ৯ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনে রিয়াজুলের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলনের আদেশ দেন আশুলিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এরপর আদালতের নির্দেশনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর থেকে রিয়াজুলের মরদেহ উত্তোলন করতে গেলে বাঁধা দেন স্বজনরা।
মরদেহ উত্তোলন করতে বাধা দিয়ে নিহত রিয়াজুলের মেয়ে তাবাসুম ইসলাম তুবা বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমার বাবা নিহত হয়েছেন। তার এমন মৃত্যুতে অনেক কষ্ট পেয়েছি। এখন আবার নতুন করে কবর থেকে আমার বাবার মরদেহ উত্তোলন করতে দেবো না।
নিহত রিয়াজুলের বড় ভাই আব্দুর রহমান নান্না বলেন, আমার ভাইয়ের মরদেহ উত্তোলন না করার সিদ্ধান্তটি পারিবারিক। মরদেহ উত্তোলন ছাড়া আইনগত যে কোনো ব্যবস্থায় আমাদের আপত্তি নেই। ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই। তবে যদি মরদেহ উত্তোলনের বিকল্প কিছু না থাকে তাহলে আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে নেব।
রিয়াজুলের স্ত্রী মোসা. মরিয়ম বলেন, গত ৫ আগস্ট যখন বিজয় মিছিল হয় তখন আমার স্বামী সেই মিছিলে ছিলেন। এ সময় ঢাকার আশুলিয়ায় বিজয় মিছিলে তাকে হত্যা করা হয়। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে যে সুরতহাল প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে সেখানে গুলিতে মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ আছে। নতুন করে আমার স্বামীর মরদেহ উত্তোলন করে কাঁটা ছেঁড়া করা হোক তা চাই না।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে। আদালতে নির্দেশনা অনুযায়ী নিহত রিয়াজুলের মরদেহ উত্তোলনের জন্য এসেছি। তবে পরিবারের সদস্যরা মরদেহ উত্তোলন করতে রাজি না হওয়ায় তাদের থেকে লিখিত নিয়ে যাচ্ছি। পুনরায় আদালতকে বিষয়টি অবগত করার পর আদালত যে নির্দেশনা দেবে তা পালন করা হবে।
মো. আব্দুল আলীম/এএমকে