বন্যায় অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়ে সম্মাননা পেল নোয়াখালীর ২৫ সংগঠন

নোয়াখালীতে সর্বকালের ভয়াবহ বন্যায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আর্তমানবতার সেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২৫ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সেনবাগের বিজবাগ ইউনিয়নে ইব্রাহিম মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। সেনবাগ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন এসব সম্মাননা ক্রেস্ট স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতাদের হাতে তুলে দেন।
জানা যায়, গত বছর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় নোয়াখালী জেলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নোয়াখালীর সেনবাগসহ বিভিন্ন উপজেলায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। স্বেচ্ছাসেবকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নোয়াখালীবাসীর পাশে থাকার কারণে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি অনেক অংশে কমে এসেছিল। তাই ইব্রাহিম মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বন্যায় অবদান রাখায় ২৫ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সম্মাননা ক্রেস্ট দেওয়া হয়।
সেনবাগ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন বলেন, স্বেচ্ছাসেবকরা কোনো স্বার্থের জন্য মানুষের পাশে দাঁড়ায় না। তারা মানবিক কাজ করতে পছন্দ করে। তবে তাদের প্রতি সবাই সুদৃষ্টি রাখলে তারা আরও বেশি বেশি কাজ করার উৎসাহ পাবে। আজ ইব্রাহিম মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন যে কাজ করেছে তার জন্য আমরা সত্যিই আনন্দিত। আশা করি এমন আয়োজন অব্যাহত থাকবে।
আয়োজক কমিটির সদস্য সামিয়া সুবর্ণা বলেন, ২০০১ সালে ওয়াছিল ভুঁইয়া জামে মসজিদের পাশে দোচালা টিনের ঘরে নূরানি মক্তবের মাধ্যমে ইব্রাহিম মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়েছে। তখন প্রায় ৬০ জন ছাত্র-ছাত্রী মাওলানা বেলায়েত হোসেনের কাছে সকালে ইসলামী শিক্ষা গ্রহণ করতেন। পর্যায়ক্রমে ২০০৭ সালে লাইব্রেরি এবং ২০১৮ সালে দাতব্য চিকিৎসালয় চালু হয়েছে। এই দাতব্য চিকিৎসালয়ে অসংখ্য মানুষ সেবা পেয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠান বাহিরের থেকে কোনো অনুদান বা চাঁদা নেয় না। সকল খরচ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জসিম উদ্দিন বহন করেন। মূলত তার বোন বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ায় তিনি বিনামূল্যে সকল সেবা প্রদান করেন।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভার্চ্যুয়ালি ইব্রাহিম মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, নোয়াখালীতে ভয়াবহ বন্যায় যে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছিল ওই সময় বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে স্বেচ্ছাসেবকরা আরেকটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। যার ফলে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনাও তুলনামূলক কম হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা করোনাভাইরাসের সময়ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাই স্বেচ্ছাসেবকদের এ অনন্য ভূমিকার কথা নোয়াখালীর মানুষ সব সময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণে রাখবে।
দক্ষিন বিজবাগ মানবিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মো. ইমরান বলেন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আজ আনন্দের দিন। একসাথে ২৫টি সংগঠনকে এভাবে সম্মাননা দেওয়ার ঘটনা নোয়াখালীতে বিরল। আমাদের সংগঠনগুলো কেবল করোনা বা বন্যায় নয়, সারাবছর যে কোনো দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আশা করি সংগঠন গুলো নব উদ্যোমে আরও এগিয়ে যাবে।
বিজবাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম উদ্দিন কাজলের সভাপতিত্বে এ সময় সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কামাল হোসেন, মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান কাজী জহিরুল ইসলাম আল মাসুদ, চট্টগ্রাম বিভাগের সাবেক কর কমিশনার শহীদ উল্লাহ, জয়নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেদায়েত উল্যাহ আনোয়ার, বিজবাগ রাব্বানিয়া আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল, উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার রুহুল আমিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
হাসিব আল আমিন/আরএআর