‘আমার ছেলে দোষী না নির্দোষ তা জানার আগেই মেরে ফেলল’

চার বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে সুজন হাওলাদার (২৪) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় চার দিনেও মামলা করতে পারেনি নিহতের পরিবার। একাধিক মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে মামলা না করতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহত সুজনের বাবা মনির হাওলাদার। বুধবার (১৯ মার্চ) সন্ধ্যায় তিনি এ অভিযোগ করেন।
মনির হাওলাদার বলেন, যারা আমার ছেলেকে মারছে ওরাতো আমারে হুমকি দিচ্ছে। যার নেতৃত্বে মারা হয়েছে সেই বাচ্চু আমাকে বলছে সে সমন্বয়ক। তাকে যদি আসামি করি তাহলে আমার এবং আমার দুই ছেলের পরিণতিও হবে সুজনের মতো। শুধু বাচ্চু না আরও অনেকে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে আমাকে হুমকি দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ছেলেকে দাফন দিয়ে বরিশাল আসার পর সকলেই বলেছে, বাচ্চু তার লোকজন নিয়ে তৈরি হয়ে আছে। আমাদেরও বাঁচতে দেবে না। যারা আমার ছেলেকে পিটিয়ে মেরেছে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে ঠিকই, আমি শহরের মধ্যেই এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছি। আমিতো রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই আর যারা আমার ছেলেকে মেরেছে তারা স্থানীয়। তাদের সঙ্গে আমিতো কোনো অংশে পারব না। আমাকে বা আমার অন্য ছেলেদেরও যদি ধরে নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে সেই আতঙ্কে আছি।
মনির হাওলাদার বলেন, বুধবার বিকেলে থানায় গিয়েছিলাম, অভিযোগ দিয়া আসছি। পুলিশ বলছে আসামি তারা দেবে। অযথা কোনো মানুষকে যেন আসামি না দেই সেই কথা বলছে। আমিও বলছি, অযথা মানুষরে কেন আসামি দিমু। তারা সুজনরে পিটানোর ভিডিও দেখেছে। ভিডিওতে যাকে যাকে মারতে দেখেছি তাদের নাম বলেছি। পুলিশ নাম লিখে রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, আমার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমি বলেছি সে যদি অন্যায় করে এবং আদালত যদি ফাঁসিও দেয় আমি মরদেহ আনতে যাব না। এমনকি কাঁদবোও না। কিন্তু আমার ছেলে দোষী না নির্দোষ তা জানার আগেই আমার ছেলেকে মেরে ফেলল। আমি খুনিদের বিচার চাই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, থানায় যেন হত্যা মামলা না হয় এজন্য হত্যায় অভিযুক্তরা পুলিশকে চাপে রেখেছে। রাজনৈতিক ও ছাত্র প্রতিনিধি পাঠিয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মামলা না নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। একাধিক পুলিশ সদস্য জানিয়েছেন, সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি নিয়মিতই থানায় যাতায়াত করেন।
আরও পড়ুন
এসব বিষয়ে জানতে মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ক্ষুদে বার্তা পাঠালে তিনি জানান, এখনো থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি নিহতের পরিবার।
বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি পেয়ে নিহতের পরিবার এলাকা ছেড়েছে বলে কোনো তথ্য আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানেন না বলে জানান।
নিহত সুজনের পরিবার বুধবার বিকেলে থানায় গিয়েছিল অভিযোগ দিতে এমন তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি কোনো জবাব দেননি।
উল্লেখ্য, চার বছরের প্রতিবেশী শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার আসামি বরিশাল নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুজন হাওলাদারকে (২৪) গত শনিবার পিটিয়ে হত্যা করে ওই এলাকার প্রভাবশালী একটি চক্র। দুপুর ২টার দিতে তুলে নিয়ে গাছে বেঁধে দফায় দফায় অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে সুজনের পরিবার থেকে ৯৯৯ নম্বরে কল করে সাহায্য চাওয়া হলে সাড়ে ৬টার দিকে তাকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পর দিন ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। মরদেহ সুজনের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর