বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিল শ্বশুর, বোনকে এসএমএস করে আত্মহত্যা

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার দেওয়ানকান্দি গ্রামে সীমা খাতুন (৩০) নামে এক গৃহবধূ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার (২ জুন) বিকেলে ওই গৃহবধূর মরদেহ দেওয়ানকান্দি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ বছর আগে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার দেওয়ানকান্দি গ্রামের খোরশেদ মোল্লার মেয়ে সীমা খাতুনের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সরিষাবন গ্রামের জয়নাল হালদারের ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী কাওসার হালদারের বিয়ে হয়। দুই বছর আগে কাওসার ঋণ করে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান। কিন্তু লকডাউনের কারণে মালয়েশিয়ায় ঠিকমতো কাজ করতে পারেননি কাওসার। এতে ঋণ পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। পরে কাওসার ঋণ পরিশোধের জন্য স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা এনে দিতে বলেন। কিন্তু সীমার বাবার দুই লাখতো দূরের কথা দুই হাজার টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই।
এ নিয়ে বিগত প্রায় দুই মাস যাবৎ কাওসারের বাবা জয়নাল হালদার ও মা আমেনা বেগম সীমাকে নির্যাতন করে আসছেন। ১৫ দিন আগে স্বামী কাওসার কথা বলা বন্ধ করে দেন। গত শুক্রবার (২৮ মে) ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ঘরের মধ্যে অচেতন হয়ে পড়ে থাকেন সীমা। পরে তার মা পারভীন বেগম মেয়েকে দেখতে গিয়ে দেখেন তার হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে। পারভীন বেগম হাত-পা বাঁধার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তার সামনেই শ্বশুর-শাশুড়ি সীমাকে বেধড়ক মারধর করে।
সীমার মা পারভীন বেগম বলেন, আমার মেয়েকে হাত-পা বেঁধে মারার পর আমার সামনে গলার ওপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ওর শ্বশুর। এ সময় আমি ওর শ্বশুরকে বলি ওতো মারা যাবে। তাকে ধাক্কা দিয়ে গলার ওপর হতে সরিয়ে দেই।
পরে সীমাকে ঘরে তালা দিয়ে আটকে রাখেন শ্বশুর জয়নাল। এ ঘটনার দুদিন পরে গত সোমবার সীমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন শ্বশুর। সীমা তার বাবার বাড়ি সদর উপজেলার দেওয়ানকান্দি গ্রামে এসে পাগলের মতো আচরণ করতে থাকেন। মঙ্গলবার সকালে তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
আত্মহত্যার আগে সীমা তার ছোট বোনের ইমোতে একটি ভয়েস এসএমএস পাঠান। এতে সীমাকে বলতে শোনা যায়-‘তুই তর দুলাভাইরে বলিছ হের মায় ও বাবায় আমারে মারলো। বাবায় পেটে লাথি মারলো, এখন আবার আমাকে বাড়ি যেতে নিষেধ করছে। আমি কী দোষ করলাম। তাহলে কি তুমি চাও পোলাপাইন লইয়া আমি চাকরি করে খাই।’
নিহত সীমার বোন লিমা আক্তার বলেন, আমার দুলাভাই বোনের সঙ্গে কথা বলতো না। তাই আমার ইমুতে ভয়েস এসএমএস করে আমার বোন দুলাভাইকে ওই কথাগুলো বলতে বলছে।
এ ব্যাপারে মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
ব.ম শামীম/আরএআর