মিস্ত্রি থেকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর, সেই আয়ে দিয়েছেন গরুর খামার
নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় কনটেন্ট তৈরি করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ফরহাদুল ইসলাম পাভেল। মানুষ হাসানোর কনটেন্ট তৈরি করে নোয়াখালীর মানুষের মন জয় করেছেন তিনি। এখন তার বিনোদনমূলক এসব ভিডিও দেখে সারাদেশের মানুষ।
২০১৮ সাল থেকে কাজের ফাঁকে ছোট ছোট কনটেন্ট তৈরি করে ফেসবুক পেজে আপলোড করতেন পাভেল। দর্শকও পছন্দ করেন তার কনটেন্ট। ভিউ হয় লাখ লাখ। এ থেকে বর্তমানে মাসে কয়েক লাখ টাকা আয় করছেন তিনি। আয়ের টাকায় করছেন গরুর খামার।
ফরহাদুল ইসলাম পাভেল নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের চৌধুরীবাড়ির মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে।
জানা যায়, ২০১৭ সালে ফরহাদ তার বাবা নজরুল ইসলামকে হারান। তারপর থেকে পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে বেড়ে ওঠা ইলেকট্রিক মিস্ত্রি পাভেল বড় স্বপ্ন দেখতেন। তাই আঞ্চলিক ভাষায় অভিনয়ে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছেন। মানুষের ব্যাপক সাড়া পেয়ে ইলেকট্রিক মিস্ত্রির পেশা ছেড়ে কনটেন্ট তৈরিতেই এখন পুরো মনোযোগ পাভেলের। সুস্থ ধারার ভিডিও তৈরিতে বদ্ধপরিকর তিনি।
ফরহাদুল ইসলাম পাভেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি যখন ভিডিও করা শুরু করি তখন কল্পনাও করিনি এসব ভিডিও ভাইরাল হবে। ভিডিও থেকে এত টাকা আসবে এটাও জানা ছিল না। মানুষ আমাকে পাগল বলত। কিন্তু আমি থেমে থাকিনি। মানুষের বাড়িতে ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজের পাশাপাশি ভিডিও বানিয়ে যেতাম। বর্তমানে আমার ভিডিও দেখে মানুষ আমাকে পছন্দ করে দেখতে আসে। আমার ভালো লাগে।
আরও পড়ুন
পাভেল আরও বলেন, আমি ক্লাস সিক্স থেকে এসএসসি পাস পর্যন্ত একটা শার্ট দিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করেছি। বর্তমানে আমি সফল হয়ে বাড়িতে গরুর খামার করছি। আমার আয়ের টাকা দিয়ে খামার আরও বড় করছি। আমি যখন প্রথম শুরু করি তখন আমার এ কাজ নিয়ে অনেকে হাসাহাসি করত। এখন আমার সাফল্য দেখে সবাই উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দেয়। আমার স্বপ্ন নোয়াখালীর ভাষাকে আরও বেশি প্রচার করা। সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে মানুষকে আনন্দ দেওয়া।
পাভেলের চাচাতো ভাই আহাদুল ইসলাম বাবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের বাড়ির রাস্তা এখনও কাঁচা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমাদের বাড়ি। ২০১৭ সালে
পাভেলের বাবা মারা যায়। ২০১৮ সাল থেকে খুব কষ্ট করে পাভেল ইলেকট্রিক মিস্ত্রির পেশার পাশাপাশি ভিডিও বানাতো। আমি তাকে সব সময় উৎসাহ দিতাম। বর্তমানে পাভেল মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছে। তার সঙ্গে যারা কাজ করছে তারাও সফল হয়েছে। পাভেল আরও এগিয়ে যাক আমরা সে প্রত্যাশা করি।
পাভেলের সঙ্গে কাজ করেন একই উপজেলার যমজ ভাই জাহিদ হাসান ফাহিম ও জাকির হোসেন নাইম। তারা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা পাভেল মামার সঙ্গে ২০১৮ সাল থেকেই কাজ করি। তিনি আমাদের সবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। আমরা দুই ভাই মাত্র এইচএসসি পাস করেছি কিন্তু তার আগেই স্বাধীনভাবে কনটেন্ট বানিয়ে টাকা ইনকাম করছি। চাকরির পেছনে না ছুটে আমরা এখন স্বাবলম্বী। অনেকে অনেক কিছু বলেছে কিন্তু আমরা সেসব পাত্তা দেইনি। বর্তমানে আমাদের সফলতা দেখে তারা বাহবা দিচ্ছে।
পাভেলের আরেক চাচাতো ভাই ইমাম উদ্দিন বুলু ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক সময় পাভেলকে আমরা অনেক বকাবকি করতাম ভিডিও বানায় দেখে। বর্তমানে তাকে সাহস দেই। কারণ সে গ্রামাঞ্চল থেকে ভিডিও বানিয়ে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করছে। গরুর খামার বড় করছে। বিভিন্ন সামাজিক কাজ করছে। আমি তার সর্বাত্মক সফলতা কামনা করছি।
পাভেলের সঙ্গে দেখা করতে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ জন আসে। তেমনই একজন আকবর হোসেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি হাতিয়া থেকে পাভেল ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। হাতিয়াতে বেশিরভাগ মানুষ পেশায় জেলে। আমিও একজন মাছ ব্যবসায়ী। সারাদিন মাছ ধরা শেষে জেলেরা যখন ফ্রী হয় তখন পাভেলের কমেডি ভিডিও দেখে। আমাদের কাছে ভালো লাগে। আমরা তাকে সুদি সেলিম হিসেবে বেশি চিনি।
কবিরহাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিগার সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাভেল ও তার দলের সদস্যরা অনেক ভালো কাজ করছে। তারা সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে প্রশংসনীয় ও একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছে। তাদের দেখে এখন অন্য যুবকরাও ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। সহযোগিতার প্রয়োজন হলে উপজেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে।
আরকে