‘৫ শতাধিক নেতাকর্মী নিহত অথচ আজ বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বেই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।
তিনি বলেছেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের মূল নেতৃত্ব দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী জুলাই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। অথচ আজ বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কারণ, বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই মুহূর্তে যদি নির্বাচন হয় বিএনপি জয়ী হবে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বিএনপির ৩১ দফা নিয়ে রংপুর, নীলফামারী ও সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলার নেতাদের নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। দেশে ৩ কোটি ৬০ লাখ নতুন ভোটার হয়েছে কিন্তু তারা ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পায়নি। এই মুহূর্তে দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে তা জনগণই ঠিক করবে।
সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের মূলমন্ত্র ছিল উন্নয়ন। আর এখন বলছে সংস্কার আগে পরে নির্বাচন। জাতির সামনে বিএনপি ৩১ দফা দিয়েছে। কই আপনারা তো জাতির সামনে কোনো সংস্কার প্রস্তাব দেন নাই। কাজেই যারা যেভাবেই চিন্তা করেন না কেন আগামী নির্বাচন সঠিক সময়ে দিতে হবে, এর কোনো ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। জনগণের ক্ষমতা জনগণকে দিতে হবে।

একই অনুষ্ঠানে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ইঙ্গিত করে বলেন, আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে দলটি ক্ষমতায় নেই। কিন্তু তারা ক্ষমতায় আছে, ক্ষমতায় থাকার সকল সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। এই অবস্থায় তারা নির্বাচনে গেলে আপনি কি মনে করেন, আরও ৮-১০টা দলের সঙ্গে তাদের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রয়েছে। না, তাদের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। একটি অসমক্ষেত্রে আমাদের নির্বাচনী যুদ্ধ করতে হচ্ছে। এটি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দল তো ৫০ বছরের পুরোনো। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয়, বারবার ক্ষমতায় আসা দল। আমরা তো পাঁচটির বেশি গাড়ি নিয়ে তাদের (এনসিপি) মতো কোথাও যেতে পারলাম না। নতুন ধারা নিজের রাজনৈতিক জীবনে চর্চা করতে হবে। শুধু মুখে বললে হবে না, রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে জনগণকে দেখাতে হবে।
রুমিন ফারহানা বলেন, ঢাকা শহরের রূপায়ন টাওয়ারে দুইটি ফ্লোরে বিরাট অফিস। এর ভাড়া কোথা থেকে আসে? শুনেছি শুভাকাঙ্ক্ষীরা নাকি টাকা দেয়। শুভাকাঙ্খীরা টাকা দেয় এমন দলকে যারা আগামীতে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবে, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো করার জন্য ফান্ডিং করে। এটি পাকিস্তান আমল থেকে চলে আসছে। ইউরোপ-আমেরিকার বড় বড় ব্যবসায়ীরাও এটি করে। তাহলে কি ধরে নেব এনসিপি এখন ক্ষমতায় আছে। এনসিপি ক্ষমতায় না থাকলে তাহলে এত সহযোগিতা কীভাবে পাচ্ছে?
সংবিধান নিয়ে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ইদানিং সংবিধান নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। সংবিধানে ভালো ভালো কথা লিখে দিলেই দেশ ভালো চলবে না। বৃটেনে কোনো সংবিধান নেই, এরপরও সেখানকার মানবাধিকার, সুশাসন, ন্যায়বিচার অনেক ভালো। সংবিধানে ভালো ভালো কথা লিখে শেখ হাসিনার মতো রাতের ভোটে ক্ষমতায় থাকলাম, গুম করলাম, হত্যা-মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী দলকে দৌড়ের ওপর রাখলাম, বিরোধী দলের নারী কর্মীদের হেনস্তা করলাম। তাহলে কি গণতন্ত্র ভালো থাকবে, সুশাসন আসবে? সংবিধান কাজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।
কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফারজানা শারমিন পুতুল, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু, সদস্যসচিব মাহফুজ উন নবী ডন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্যসচিব আনিছুর রহমান লাকু প্রমুখ।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ