পদ্মপাতায় আম চিড়া দই রসগোল্লায় আপ্যায়ন

আম, চিড়া, দই, আখের গুড় ও রসগোল্লা বাঙালির ঐতিহ্যবাহী মুখরোচক খাবার। একসময় বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে বর ও কনেপক্ষের নাশতা হিসেবে এসব খাবার উপস্থাপন করা হতো। খাবারের পাত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো পদ্মপাতা। প্রতি বছর মধু মাসে প্রায় বাড়িতেই এসব ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে আতিথেয়তা করা হতো। করা হতো জামাই আদর।
সময়ের পরিবর্তনে এ কালের লুচি-পরোটায় হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালির ওইসব মুখরোচক খাবার। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দই, চিড়া, আম, আখের গুড় ও রসগোল্লা খাওয়ার আয়োজন করেছেন মেহেরপুরের এক জনপ্রতিনিধি। মধু মাসে এসব খাবার খেতে ভিড় জমিয়েছে এলাকার মুরুব্বিসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ।
মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ওয়াসিম আলী বৃহস্পতিবার (০৩ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নিজ বাড়িতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মধু মাস উদযাপন করেন। এতে ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার চার শতাধিক মানুষকে দাওয়াত করা হয়। কৃষকরা মাঠে বের হওয়ার আগেই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বুড়িপোতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাজামান।
তবে দাওয়াতে প্রবীণ ব্যক্তিদের উপস্থিতি ছিল বেশি। খাবারের তালিকায় ছিল লাল ধানের চিড়া, গরুর খাঁটি দুধের টক দই, আখের গুড়, রসগোল্লা ও আম। পদ্মপাতায় সাজানো হয় এসব খাবার। মুরব্বিসহ নানা বয়সের মানুষ পর্যায়ক্রমে আসেন ব্যতিক্রমী আয়োজন মধু মাসের আনন্দ উপভোগ করতে।

দাওয়াত খেতে আসা প্রবীণ ব্যক্তি আফসার আলী বলেন, ছোট বেলায় বাবার সঙ্গে যেখানেই দাওয়াত খাওয়ার সুযোগ হয়েছে সেখানেই গিয়েছি। পদ্মপাতায় চিড়া দই মিষ্টি খেতে অনেক ভালো লাগতো।
স্থানীয় আরেক প্রবীণ তাহাজ উদ্দিন বলেন, এখন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় খেতে না পারায় দাওয়াত খাওয়া হয় না। ওয়াসিমের দাওয়াতে লোভ সামলাতে পারলাম না। খেতে এসে পুরোনো দিনের স্মৃতি মনে পড়ে যায়। চিড়া দই আর পদ্মপাতা দেখে মনে হচ্ছে ছেলেবেলার সেই বরযাত্রীর কথা। বরের সঙ্গে দাওয়াত খেতাম সেই চিড়া দই আর রসগোল্লা। সে সময়ে অনেক আনন্দ করতাম । সেকালের নাশতা আর একালের নাশতায় রয়েছে অনেক পার্থক্য। পেটে জায়গা না হলেও খেতে মন চাইতো।
ইউপি সদস্য ওয়াসিম বলেন, ওয়ার্ডের সকল বয়স্ক মানুষ আমার কাছে খাওয়ার দাবি করেন। আমি তাদের দাবির প্রেক্ষিতে মধু মাস উদযাপন করছি। যাদের বয়স ষাট-পঁয়ষট্টি বছর তাদের জন্যই এই আয়োজন। তবে নতুন প্রজন্মের মানুষ এসেও সেকালের খাবারের প্রশংসা করে। প্রায় চার শতাধিক মানুষকে দাওয়াত করা হয়েছে। আগামীতে এ আয়োজনে আরও বেশি মানুষকে দাওয়াত করা হবে। যাতে মানুষ এমন আয়োজনের কথা মনে রাখে। তবে আমার মত অনেকেরই উচিৎ এমন দেশি খাবারের আয়োজন করা। তাহলে বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য জেগে থাকবে।
বুড়িপোতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাজামান বলেন, সময়ের পরিবর্তনের পাশাপাশি খাবারের পরিবর্তন ঘটেছে। লাল ধানের চিড়া, গরুর দুধের দই, রসগোল্লা, পদ্মপাতা আজ হারাতে বসেছে। আমার ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ওয়াসিম যে আয়োজন করেছেন তা বাঙালির ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা। এমন আয়োজনকে সাধুবাদ জানাই।
আরএআর