গোয়ালন্দে সড়ক নির্মাণে অনিয়ম, অভিযানে দুদক

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে একটি নির্মাণাধীন রাস্তার কাজের প্রকল্পের অনিয়মের অভিযোগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি এনফোর্সমেন্ট টিম।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার আবুল বাশারের নেতৃত্বে দুদকের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী কার্যালয়ে অভিযান চালায়। পরবর্তীতে যে রাস্তার কাজ নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল সরেজমিনে দুদক তা পরিদর্শন করে।
জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের চর দৌলতদিয়া হাট থেকে লাল মিয়া মৃধা পাড়া ভায়া জয়নাল মৃধার বাড়ি পর্যন্ত ১৪১৫ মিটার রাস্তার নির্মাণকাজ গ্রাম সড়ক পুনর্বাসন প্রকল্পের (ভিআরআরপি) আওতায় চলমান রয়েছে। নির্মাণের জন্য প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয় ১ কোটি ৪৪ লাখ ৫৬ হাজার ১৬৫ টাকা। পরে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫৬ টাকা চুক্তি মূল্যে কাজটি পায় মেসার্স লুপিন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২৪ সালের ১০ অক্টোবর। কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালের ৭ জুনের মধ্যে। যা বাস্তবায়ন করে উপজেলা এলজিইডি। কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে সড়কটি নির্মাণে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। নিন্মমানের খোয়া দিয়ে সড়ক নির্মাণ করলে এলাকাবাসী বাঁধা দেয়। পরে উপজেলা এলজিইডি সড়কের নির্মাণকাজ পরিদর্শন করে কাজ বন্ধ করে দেন।
এই রাস্তা নির্মাণের অনিয়মে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে দুদক। এ সময় দুদক এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গিয়ে প্রকল্পের বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে। এ ছাড়া প্রকল্পের বিভিন্ন কাগজপত্র খতিয়ে দেখে। পরে যে রাস্তা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করতে আসে সেই রাস্তা সরোজমিনে পরিদর্শন করে দুদক।
দুদক ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার আবুল বাশার বলেন, গোয়ালন্দে একটি সড়ক নির্মাণকাজের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করি। রাস্তার কাজ পরিদর্শন কালে আমরা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান, উপজেলা এলজিডি ও এলাকাবাসীর সামনে রাস্তার দৈর্ঘ্য, প্রস্থের মাপ নিই। এ ছাড়া রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় খোয়ার লেয়ারের মাপ নেই। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীর মতামত পেলে আমরা পূর্ণঙ্গ প্রতিবেদন কমিশন বরাবর দাখিল করবো। গোয়ালন্দ উপজেলা এলজিডি থেকে আমরা প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পের ফাইল ও নথিপত্র সংগ্রহ করেছি এবং অবশিষ্ট আরও কিছু রেকর্ড আমাদের সংগ্রহ বাদ আছে। সবকিছু সংগ্রহ করে আমরা বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করবো।
তিনি বলেন, আমরা সরেজমিন পরিদর্শনে এসে দেখতে পেয়েছি রাস্তার নির্মাণকাজ প্রকল্প সম্পর্কে জানাতে এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত কোনো সাইনবোর্ড নেই। এ ছাড়া ঠিকাদার কর্তৃক কিছু নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু প্রকৌশলী ও এলাকাবাসীর বাধার মুখে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সেটা ব্যবহার করতে পারেনি। আমরা এসে দেখেছি, তারা নিম্নমানের খোয়াগুলো সরিয়ে নিচ্ছেন।
দুদুকের এই সহকারী পরিচালক বলেন, এই সড়ক নির্মাণে নিন্মমানের ইট, খোয়া এবং রাস্তায় রাবিশ ব্যবহারের অভিযোগ পাই। কিন্তু সরেজমিনে এসে রাবিশ ব্যবহারের সত্যতা পাইনি। রাস্তার নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। ঠিকাদারকে এখনো চূড়ান্ত বিল প্রদান করা হয়নি। এখন পর্যন্ত অর্ধেক বিল প্রদান করা হয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, ইতোপূর্বে এটা এইচবিবি রাস্তা ছিল। এইচবিবি রাস্তা হওয়ার কারণে যে ইটটা আগে ছিল এটাও এই রাস্তায় ব্যবহার করা হচ্ছে। ওই ইট বাবদ ৪৮ লাখ ৪ হাজার ৩০৭ টাকা ইস্টিমেটে ধরা আছে। এই টাকাটা বাদ দিয়ে ঠিকাদারকে বিল প্রদান করা হবে। কাজ শেষ হলে চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করা হবে। এই রাস্তা নির্মাণের অবশিষ্ট কাজ যেন সঠিকভাবে হয় তার জন্য ঠিকাদার ও উপজেলা এলজিইডিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী ফয়সাল জাহাঙ্গীর স্বপ্নীল বলেন, গ্রাম সড়ক পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় একটি রাস্তা নির্মাণকাজের অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করতে আজ ফরিদপুর থেকে দুদকের একটি টিম গোয়ালন্দে এসেছিল। তারা সরজমিনে ওই রাস্তাটি পরিদর্শন করেছে। আমরা তাদের তদন্ত কাজে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছি।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এএমকে