মায়ের চিকিৎসার টাকা হারিয়ে দিশেহারা মনির, উদ্ধার করে দিলো পুলিশ

মায়ের চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিনের জমানো টাকা হারানোর তিনদিন পর ফেরত পেলেন মনিরুল ইসলাম (৪৫) নামের এক ব্যবসায়ী। হারিয়ে যাওয়া দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে এক লাখ আটচল্লিশ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার(২৯ এপ্রিল) বিকেলে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওস) আমান উল্লাহ তার হাতে টাকাসহ একটি ব্যাগ তুলে দেন। বাকি টাকা উদ্ধারে কাজ করছে পুলিশ।
জানা গেছে, গত শনিবার (২৬ এপ্রিল) মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে সকাল আটটায় রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে মোটরসাইকেলে গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হন মনিরুল। তার সাথে একটি কালো রঙের ব্যাগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ছিল। ব্যাগটি মোটরসাইকেলের পেছনে কাপড়ের রশি দিয়ে বাধা ছিল। সকাল ১০টার দিকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় পৌঁছলে মোটরসাইকেলের পেছনে টাকার ব্যাগটি না পেয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় পড়ে যান এবং পেছনের ফেলে আসা রাস্তায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে টাকা হারানোর বিষয়টি প্রকাশ করেন।
এদিকে মনিরুলের টাকাসহ কালো রঙের ব্যাগটি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বারবাড়িয়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় সড়কেই পড়েছিল। পল্লীসেবা গাড়ির চালক মানিক মিয়া যাত্রীসহ গাড়ি নিয়ে মানিকগঞ্জ ফেরার পথে সড়কে কালো রঙের ব্যাগটি দেখতে পেয়ে হেলপারকে সেই ব্যাগটি গাড়িতে তুলতে বলেন। হেলপার ব্যাগটি গাড়িতে উঠিয়ে চেইন খুললে ব্যাগে টাকা দেখতে পান। আশপাশের যাত্রীরাও বিষয়টা নিয়ে কানাঘুষা শুরু করে। একপর্যায়ে গাড়িটি মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছালে মাঝ বয়সি মহিলা এক যাত্রী তার টাকা বলে দাবি করেন। এ নিয়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি মোটরসাইকেল যোগে গাড়ির চালক মানিকসহ টাকার ব্যাগটি ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাদের টাকা বলে নিয়ে যায়। গাড়ির হেলপার বিষয়টা মালিক সমিতিকে অবগত করলে তারা গাড়ির চালক এবং ব্যাগ উদ্ধারের জন্য মানিকগঞ্জ সদর থানা পুলিশকে অবগত করে। পুলিশ প্রায় ছয় ঘণ্টা পর টাকার ব্যাগ ও চালক মানিক মিয়াকে উদ্ধার করে।
টাকা উদ্ধারের পর পুলিশ স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের বিষয়টা জানালে তৎক্ষণাৎ সকলেই ফেসবুকে প্রচার করতে থাকে। ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলামের স্বজনরা পরদিন বিষয়টা ফেসবুকে দেখামাত্রই তাকে ফোন করে জানান। এরপর তিনি মানিকগঞ্জ সদর থানায় এসে টাকার বিষয়ে যোগাযোগ করলে পুলিশ তার সাথে কথা বলে নিশ্চিত হতে থাকে। সবকিছু সঠিকভাবে প্রমাণ সহকারে বলতে পারায় মঙ্গলবার বিকেলে ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলামকে হারানো টাকা ফেরত দেয় পুলিশ।
ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলামের ভাষ্যমতে তার হারানো কালো ব্যাগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ছিল, কিন্তু পুলিশ উদ্ধার করতে পেরেছে ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। বাকি টাকাটা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মনিরুল ইসলাম রাজধানীর উত্তরা এলাকায় একটি ভাড়া দোকানে দরজার ব্যবসা করেন। ঢাকার উত্তরাতে রাজবাড়ী ডোর গ্যালারি নামে তার একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি বালিয়াকান্দী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের বড় হিজলি এলাকায়। তিনি ওই এলাকার আব্দুল মালেক মোল্লার ছেলে। ব্যবসার সুবাদে মনিরুল উত্তরা এলাকাতেই থাকেন।
এ বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, মায়ের চিকিৎসা এবং ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য দীর্ঘদিন ধরে এই টাকা আমি জমিয়েছি। টাকা হারিয়ে আমার মাথায় যেন আসমান ভেঙে পড়লো। একদিন পর স্বজনদের মাধ্যমে হারানো টাকা পুলিশের জিম্মায় আছে জানতে পারি। এই টাকা পেয়ে যারা পুলিশের কাছ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন আমি তাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ। এ টাকা দিয়ে আমি আমার মায়ের চিকিৎসা করাতে পারবো। বাকি টাকা উদ্ধার হলে ঋণের টাকাও পরিশোধ করতে পারব।
মানিকগঞ্জ সদর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ বলেন, হারানো টাকা উদ্ধার করে মনিরুল ইসলামকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। ব্যাগে আরো কিছু টাকা ছিল বলে তিনি জানিয়েছেন। আশা করছি বাকি টাকাও উদ্ধার করে আমরা তাকে দিতে পারবো বলে তিনি জানান।
সোহেল হোসেন/এমএএস