অপসারণ করা হচ্ছে মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ শতবর্ষী গাছ

যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দুই পাশের শতবর্ষী মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ এবং হেলে পড়া ডাল অবশেষে অপসারণ করা হচ্ছে। এগুলো অপসারণ করতে চিঠি দিয়েছে জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠিটি মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সড়ক ও জনপথ বিভাগ, সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে দেওয়া হয়েছে।
ঝড় ও বর্ষা মৌসুমে এ সড়কটিতে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বিষয়টি গত ২৫ এপ্রিল জেলা পরিষদের দৃষ্টিতে আনেন নাভারণ হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রোকনুজ্জামান। পাশাপাশি যশোর নাগরিক অধিকার আন্দোলনের পক্ষ থেকেও গাছ অপসারণে আবেদন করা হয়। বিষয়টি আমলে নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেয় জেলা পরিষদ।
চিঠিতে বলা হয়, যশোর সড়ক বিভাগাধীন যশোর-বেনাপোল (এন-৭০৬) একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়ক। উল্লেখিত জাতীয় মহাসড়কের উভয় পাশে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু শতবর্ষী মরা গাছ ও ঝুঁকিপূর্ণ ডালপালা রয়েছে। প্রায় সময় শতবর্ষী গাছের ডালপালা ভেঙে পথচারী নিহত/আহত ও যানবাহনের ক্ষতি হচ্ছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে ঝড় ও বৃষ্টিপাতের ফলে যে কোনো সময় মরা গাছ ও গাছের ঝুঁকিপূর্ণ ডালপালা ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনায় জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। এ বিষয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা পরিষদকে এসব গাছ ও গাছের ঝুঁকিপূর্ণ ডালপালা অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনেক বার বলা হলেও কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। বর্তমানে জীবনহানির ঝুঁকি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এমতাবস্থায়, সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণকে উক্ত মরা গাছ ও গাছের ঝুঁকিপূর্ণ ডালপালা কর্তন ও অপসারণ করে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো চত্বরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক যশোর রোডে (যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক) কালের সাক্ষী হয়ে থাকা শতবর্ষী গাছগুলো এখন মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে। পরিবেশবন্ধু গাছগুলো কালের পরিক্রমায় এখন মহাশত্রু। কারণ গাছগুলোর বেশির ভাগই এখন মৃত বা অর্ধমৃত। সরকারি হিসেবে ৬৯৭টি বুড়ো গাছ এখনো টিকে আছে, কিন্তু এগুলোর ৬০ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া ছোটবড় ঝড়ে এ পর্যন্ত ১৫টি গাছ উপড়ে রাস্তার পাশে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে।
২০১৭ সালে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক চার লেন করার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু গাছ কেটে রাস্তা সম্প্রসারণের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন পরিবেশবাদীরা। আদালত ৬ মাসের জন্য গাছ কাটার ওপর স্থগিতাদেশ দেন। এতে মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে রাস্তার দুই পাশে গাছ রেখেই সড়কের পুনর্নির্মাণ কাজ করা হয়। রাস্তা চওড়া করার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় এসব শতবর্ষী গাছ। মাটি কেটে ছয় ফুট গর্ত করে রাস্তার নির্মাণের সময় গাছের শিকড় কাটা পড়ে। এতে একটু শক্তিশালী ঝড় হলেই উপড়ে পড়ছে গাছগুলো। ফলে গাছের কারণে এই মহাসড়কটি এখন সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
নাভারণ হাইওয়ে থানার ওসি রোকনুজ্জামান বলেন, কয়েকদিন পর পর এ সড়কে গাছ পড়ে, ডাল পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে। চলতি ঝড়ের মৌসুমে সর্বদা আতঙ্ক নিয়ে এই সড়কে চলাচল করা লাগছে। যে কারণে এসব গাছ অপসারণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ভুপালী সরকার বলেন, এ গাছগুলোর কারণে মহাসড়কের আশপাশে বসবাসকারীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণে গত বছরের ২৮ নভেম্বর জেলা পরিষদ বরাবর চিঠি দিয়েছিলাম। মঙ্গলবার মরা গাছ ও ঝুঁকিপূর্ণ ডাল অপসারণের চিঠি পেয়েছি।
যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. আছাদুজ্জামান বলেন, নাগরিক আন্দোলন কমিটি বিভিন্ন দপ্তর থেকে পাওয়া আবেদনের ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণে ইউএনওদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে সহযোগিতা করতে সওজ, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে বলা হয়েছে।
যশোরের জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, এসব গাছের কারণে ইতোমধ্যে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাণহানিও হয়েছে। পাশাপাশি একাধিক আবেদনও পড়েছে। এ কারণে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মরা গাছ ও ঝুঁকিপূর্ণ ডাল অপসারণ করতে ইউএনওদের বলা হয়েছে। পরে সেগুলো নিলামে বিক্রি করা হবে।
আরএআর