রান্নার সময় দগ্ধ সুইটি মারা গেছেন, ছোট বোনের অবস্থা শঙ্কাজনক

নীলফামারীতে রান্নার সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দুই বোন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে বড় বোন সুইটি আক্তার (২৩) মারা গেছেন। সুইটির ছোটবোন তাজকিনার (২০) অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সুইটি আক্তার ও তাজকিনা আক্তার নীলফামারীর ডোমার উপজেলার হরিণচড়া গ্রামের বাবুল হোসেনের মেয়ে। দুই বোনই উত্তরা ইপিজেডের সেকশন সেভেনে নামে একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন এবং কাজের সুবাদে জেলা সদর উপজেলার হাজীপাড়া এলাকার একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। সুইটি নীলফামারী মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং তাজকিনা ডোমার মহিলা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী।
স্বজন ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বাবার অভাবের সংসারে দারিদ্র্য ঘোচাতে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে কাজ নিয়েছিলেন ওই দুই বোন। প্রতিদিনের মতো আজও কাজে যাওয়ার জন্য ভোরে উঠে গ্যাসের চুলায় রান্না উঠান। এ সময় হঠাৎ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়। এতে সুইটি আক্তার ও তাজকিনা আক্তার অগ্নিদগ্ধ হন। বিস্ফোরণের শব্দ ও ধোঁয়া দেখে আশপাশের বাসিন্দারা ছুটে আসেন এবং উত্তরা ইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের উদ্ধার করে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে রংপুর মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোরে তারা রান্না করছিলেন। গ্যাস সম্ভবত লিক ছিল আগে থেকেই। তাই গ্যাসে আগুন জ্বালানোর সময় পুরো রান্না ঘরে আগুন লেগে যায়। এ সময় প্রথমে একজনের গায়ে আগুন লাগে পরে তাকে বাঁচাতে গিয়ে অন্যজনও দগ্ধ হয়েছে। এ সময় বাসার গেট বন্ধ থাকায় দেয়াল ভেঙে প্রতিবেশী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়।
বাবা বাবুল হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আগুন আমার মেয়ে দুইটাকে শেষ করি দিল। আমি এখন কি নিয়ে বাঁচব। ইপিজেডে কাজ করায় পাশে ভাড়া থাকত। সকালে অফিস যেতে হয় তাই রান্না করছিল। গ্যাসের আগুন মেয়ে দুইটাকে পুড়ে মারল।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহীন শাহ বলেন, সকাল ৯টার দিকে আশঙ্কাজনকভাবে দুইজনকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের দুইজনের শরীরের ৯০ ভাগ পুড়ে গেছে। এর মধ্যে দুপুরে একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আরেকজনের অবস্থাও সংকটাপন্ন। তাই তাকে ঢাকায় পাঠানোর চেষ্টা করছি না। আমাদের চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রয়েছে।
শরিফুল ইসলাম/আরএআর