নিজে কাজ না করে অন্যকে দিয়েছেন ঠিকাদার

কাজের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার না হওয়া সত্ত্বেও কাজ করার প্রামাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে রাজশাহী এলজিইডির কার্যালয়ে অভিযানে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজপত্র বিশ্লেষণে এমন প্রমাণ পাই দুদক।
দুদক বলছে- একটা কাজ যে পাবে, মূলত তার দায়িত্বে কাজটি করা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার না করে তৃতীয় বা চতুর্থ পক্ষ কাজটি করছে। সেই ক্ষেত্রে অনিয়মের সুযোগ থেকে যায়। তবে প্রথম অনিয়ম কাজ হস্তান্তর করা। একজনের কাজ আরেক জনে করা এটা প্রাথমিক অপরাধের মধ্যেই পড়ে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে- রাস্তা ও ব্রিজ নির্মাণ কাজে দুর্নীতিসহ বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রাজশাহী অফিসে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলামের কার্যালেয় দুদক টিম বিভিন্ন কাগজপত্র দেখে। এ সময় ফাইলগুলো থেকে নম্বর সংগ্রহ করে সরাসারি ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে দুদক। এ সময় জানতে চাওয়া হয় কাজ ও বিল পরিশোধের বিষয়ে। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে এক ঠিকাদের কাজ অন্য জন ঠিকাদারের করার বিষয়টি।
দুদকের জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল এ অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান শেষে দুদক কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঠিকাদারকে বিল প্রদানের সময় ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আমরা অধিকতর তদন্ত শুরু করেছি। তদন্ত শেষ হলে বিষয়টি জানা যাবে। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এলজিইডি অন্তত আটটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল প্রদান করেছে। সেক্ষেত্রে যেসব উন্নয়ন কাজ হয়েছে তা নির্ধারিত ঠিকাদার করেননি। তৃতীয় পক্ষ, চতুর্থ পক্ষ কাজ সম্পন্ন করেছে। এটি প্রাথমিকভাবে অনিয়ম। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে ওই সকল উন্নয়ন কাজের নথিপত্র তলব করা হয়েছে। নথিপত্র বিশ্লেষণের পর তথ্য দুদকের কেন্দ্রীয় অফিসে পাঠানো হবে। অনিয়ম বা দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে দুদকের কেন্দ্রীয় অফিস ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানা যায়, এলজিইডির কার্যালয়ের আওতাধীন গ্রামগঞ্জের রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণকাজে নিম্নমানের পণ্য ব্যবহার, কাজের গুণগতমান বজায় না রাখা, কাজ না করে কিংবা নামমাত্র কাজ দেখিয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অধিকাংশ অভিযোগ ঠিকাদার ও প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, দুদক এসে বিভিন্ন ফাইলপত্র দেখেছে। আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা কিছু কাগজপত্র চেয়েছে সেগুলো আমরা তাদের সরবারহ করব।
ঘুষ লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘুষ নেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, অভিযোগ ছিল ঠিকাদারদের বিল প্রদানের ক্ষেত্রে সকল প্রজেক্টে নির্দিষ্ট কমিশন অর্থাৎ ঘুষ নেওয়া হচ্ছে। আমরা অফিসে সব প্রকল্পের নথিগুলো দেখেছি। যেগুলোর বিল দেওয়া হয়েছে সেগুলোও দেখা হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ছিল- আমরা তাকে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ঘুষের বিষয়ে আমরা তাৎক্ষণিক প্রমাণ পাইনি। তবে বিভিন্ন নথি আমরা পর্যালচনা করে যেটা পেলাম- সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজ পেয়ে অন্য কাউকে দিয়ে কাজ করছেন। কাজের ক্ষেত্রে এই অনিয়মগুলো হচ্ছে। কাজগুলো আমাদের সরেজমিনে দেখে অন্যান্য প্রকৌশলী নিয়োগ করে পরিমাপ করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেয়। সুতরাং কাজের মানের বিষয়ে আমরা আজ বলতে পারব না।
তিনি আরও বলেন, কাজের গুণগত মান যদি না থাকে সেটা অন্যান্য দপ্তর দিয়ে, অন্যান্য প্রকৌশলী টিম দ্বারা পরিমাপ করলে আমরা বুঝতে পারব যে আসলে কাজটায় কতটুকু দুর্নীতি তথা অনিয়ম হয়েছে। তো সেটার আর্থিক মূল্য হিসেবে পরবর্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা তথা অনুসন্ধান ও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে এটা তাৎক্ষণিক এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।
ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের প্রচলিত আইন মোতাবেক একটা কাজ যে পাবে মূলত তার দায়িত্ব কাজটি করা। তো এক্ষেত্রে হস্তান্তর হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার তৃতীয় বা চতুর্থ পক্ষ দিয়ে কাজটি করছে। সেই ক্ষেত্রে অনিয়মের সুযোগ থেকে যায়। তবে প্রথম অনিয়ম হস্তান্তর করাটা। একজনের কাজ আরেক জনে করা এটা প্রাথমিক অপরাধের মধ্যেই পড়ে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ এপ্রিল দলিল রেজিস্ট্রেশন, তল্লাশি ও নকল উত্তোলনসহ অন্যান্য কাজে সেবা প্রার্থীদের হয়রানি এবং ঘুষ দাবিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে অভিযান পরিচালনা করেছিল দুদক।
শাহিনুল আশিক/আরএআর