সেই তাহমিনার পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন জেলা প্রশাসক

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান পেয়েও ভর্তি ও লেখাপড়ার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকা নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার তাহমিনার পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ।
সোমবার (১২ মে) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে ডেকে ভর্তি ও লেখাপড়ার খরচ হিসেবে নগদ অর্থ তুলে দেন তিনি। সহায়তা পেয়ে তাহমিনা জেলা প্রশাসকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
এর আগে সকালে জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় তাহমিনার পরিবার’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি জেলা প্রশাসকের নজরে আসে। তিনি তাৎক্ষণিক তাহমিনা আক্তারকে ডেকে আনেন।
জানা যায়, দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করেই বেড়া ওঠা তাহমিনা আক্তারের। হাতিয়া জনকল্যাণ শিক্ষা ট্রাস্ট হাইস্কুল থেকে জিপিএ-৪.৮৩ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও মোহাম্মদ আলী কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেছেন তিনি। অন্যদের পুরাতন বই সংগ্রহ করে শেষ করেছেন পড়ালেখা। কোচিংয়ের সামর্থ্য না থাকলেও প্রবল আত্মবিশ্বাস ও অধ্যবসায়ে নিজেকে প্রস্তুত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। কোনো কোচিং ছাড়াই তাহমিনা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তবে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তার পরিবার ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, টাকার অভাবে একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন ভেঙে যেতে পারে না। শুধুমাত্র দরিদ্র হওয়ার কারণে আর বাবা দিনমজুর বলে একজন মেধাবী ছাত্রের ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে পারে না। এ কারণে তাকে ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ হিসেবে নগদ অর্থ তুলে দিয়েছি। তাহমিনার উচ্চশিক্ষা নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে ভবিষ্যতেও তার পাশে থাকব।
ভর্তির টাকা পেয়ে আনন্দিত তাহমিনা আক্তার। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ জোগাড় করেছি। পুরাতন বই পড়েছি। কোথাও কোচিং না করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু আমার স্বপ্ন অনেকটা অধরার মতো ছিল। জেলা প্রশাসক স্যার আমার স্বপ্ন পূরণে পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি আজীবন স্যারের কথা মনে রাখব।
তাহমিনার মা রাবেয়া খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেয়ে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। সে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। কিন্তু এখন তো ভর্তি আর পড়াশোনার খরচ জোগানোই বড় চিন্তা ছিল। জেলা প্রশাসক স্যার আমার মেয়েকে ডেকে নিয়ে নগদ টাকা দিয়েছেন। আমি চাই আমার মেয়ে যেন স্যারের মতো বড় মনের মানুষ হতে পারে। স্যারের জন্যও আমি দোয়া করব সব সময়।
এ সময় মোহাম্মদ আলী কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আজমির হোসেন, বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. হারুন বাদশাসহ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ উপস্থিত ছিলেন।
হাসিব আল আমিন/আরএআর