লক্ষ্মীপুরে দুস্থ মৎস্যজীবীদের কর্মসংস্থানে রোগাক্রান্ত বাছুর

লক্ষ্মীপুরে দুস্থ মৎস্যজীবীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে রোগাক্রান্ত ও ছোট আকারের বকনা বাছুর বিতরণের অভিযোগ উঠেছে মৎস্য বিভাগের বিরুদ্ধে। এতে ক্ষুদ্ধ জেলেদের প্রতিবাদে মুখে তাৎক্ষণিক ৩ টি বাছুর ঠিকাদারকে তাৎক্ষণিক ফেরত দেওয়া হয়। তবে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদ আলম রানা ওই বাছুরগুলো ফেরতের নির্দেশ দেন। তিনি ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের সদর উপজেলা সভাপতি।
মৎস্য বিভাগ সূত্রের বরাতে জানা গেছে, ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় এবং সদর উপজেলা মৎস্য বিভাগের সহায়তায় ১৬ জন দুস্থ মৎস্যজীবীর মধ্যে বকনা বাছুর বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। চট্টগ্রামের আবদুর রহিম অ্যাগ্রো এণ্ড ফিশারিজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাছুরগুলো ক্রয়ের দায়িত্ব পায়। বৃহস্পতিবার সদর উপজেলা পরিষদের সামনে ইউএনও জামশেদ আলম রানা ওই বাছুরগুলো বিতরণের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
মৎস্যজীবীরা জানান, ঠিকাদার দেখেশুনে রোগাক্রান্ত বাছুর ক্রয় করেছে। ওজন এবং আকারে একটিও সরকার নির্ধারিত মানের নয়। এ নিয়ে তারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একপর্যায়ে ইউএনও ৩টি বাছুর ফেরত নিয়েছেন।
উপজেলার চর রমনীমোহন ইউনিয়নের আবদুর রহিম বলেন, “অসুস্থ ও আকারে ছোট বাছুর দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানালে প্রশাসন বাছুরটি ফিরিয়ে নিয়ে যায়। আরও দুইজন জেলেও তাদের বাছুর ফেরত দিয়েছে। পরবর্তীতে সুস্থ-সবল বাছুর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।”
মৎস্যজীবী বাচ্চু মিয়া বলেন, “বাছুরগুলোর বয়স কম, রোগাক্রান্ত এবং ওজন ও আকারে ছোট। ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় কেনা। তবে একটি বাছুরের জন্য সরকারি বরাদ্দ ৩০ হাজার টাকা শুনেছি। নিয়ম অনুযায়ী বাছুর কেনা হয়নি। আগেও একই ধরণের বাছুর দেওয়ায় কয়েকদিন পরই মারা গেছে। মৎস্য বিভাগকে জানিয়েও কেউ কোন প্রতিকার পায়নি।”
ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবী আবদুস সাত্তার বলেন, “গত বছর আমাকে একটি অসুস্থ বাছুর দেওয়া হয়। ডাক্তার দেখিয়েও তাকে সুস্থ্য করা যায়নি। বাছুরকে চিকিৎসা করাতে ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কয়েকদিন পরই বাছুরটি মারা গেছে। মৎস্য বিভাগে পরে আরেকটি দেবে বলে আশ্বাস দিলেও এখনো তা পাইনি।“
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘আবদুর রহিম এগ্রো এণ্ড ফিশারিজ’র প্রতিনিধি মো. জাফর সাংবাদিকদের বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বাছুরগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। এখানে রোগাক্রান্ত কোন বাছুর নেই। ৩টি বাছুর ফেরত দেওয়ার প্রশ্নে তিনি কোন উত্তর দেননি।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “সুস্থ-সবল বকনা বাছুর জেলেদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। শুধুমাত্র রোগাক্রান্ত ও আকারে ছোট হওয়ায় ৩টি বাছুর ফেরত দিয়েছি। উপকারভোগী নির্বাচন, বাছুর ক্রয় ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগে কোন অনিয়ম হয়নি। তাছাড়া বাছুর ফেরত দেওয়ার ঘটনা পূর্বে কখনো ঘটেনি। আগামী ১ মাসের মধ্যে যদি কোন বাছুর মারা যায়। তাহলে ওই উপকারভোগীকে পুনরায় বাছুর দেওয়া হবে। বিষয়টি প্রত্যেককে বলে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া রোগাক্রান্ত হওয়া পূর্বে বাছুর মারা গিয়েছে। তবে ওই উপকারভোগীকে পুনরায় বাছুর দেওয়া হয়নি। বিষয়টি আমার জানা নেই।”
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদ আলম রানা বলেন, “বাছুর কেনার জন্য ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই বাছুরগুলোই জেলেদের দেওয়া হয়ে থাকে। জেলেদের দাবির প্রেক্ষিতে ৩টি বাছুর ঠিকাদারকে ফেরত দেওয়া হয়। ঠিকাদারকে মৌখিক সতর্ক করার জন্য মৎস্য বিভাগকে বলা হয়েছে।”
শাকিল/এসএমডব্লিউ