সিরাজগঞ্জে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে যমুনা পাড়ের মানুষের

সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পূর্ব পাশে জেগে ওঠা নতুন চরের কারণে পানি প্রবাহের দিক বদলে গিয়ে পশ্চিম পাড়ে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। জেলার ভাটপিয়ারী, শিমলা ও পাঁচঠাকুরীসহ নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে প্রতিদিনই বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে নদীপাড়ের মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, নদীর পূর্ব পাড়ে জেগে ওঠা নতুন চরের কারণে যমুনার প্রবল স্রোত এখন পশ্চিম পাড়ে আঘাত হানছে। যে চরটিতে কৃষকরা বিভিন্ন ফসলের চাষ করতেন, সেই চর বর্ষা শুরুর আগেই নদী গিলে ফেলেছে। চৈত্র ও বৈশাখ মাসেই তিন কিলোমিটারজুড়ে পুরো চরের চাষযোগ্য জমি ভেঙে যায়। এর ফলে শুধু উৎপাদনশীল কৃষিজমিই নয়, নিরাপত্তার আশ্রয়ও হারিয়েছে অনেক পরিবার।
ভাটপিয়ারী গ্রামের বাসিন্দা মো. হেলাল খান বলেন, যেখানে আগে চাষাবাদ করতাম, এখন সেখানে শুধু পানি আর স্রোতের ধাক্কা। আমরা বহুবার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি, মানববন্ধন করেছি, কিন্তু কেউ শোনেনি। এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছি।
স্থানীয় কৃষক বাদশা মিয়া বলেন, চরের জমিগুলো আমাদের জীবিকার উৎস ছিল। এখন ভাঙনে শুধু চরই নয়, তার আশপাশের জমি, গাছপালা, বাড়িঘর সব চলে যাচ্ছে যমুনায়।
বার পাঁচিল এলাকার নাসিম শেখ বলেন, যমুনা নদীর ভাঙনের মূল কারণ এলাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কর্তৃক বালু উত্তোলন। প্রায় ৫০ টার মতো ড্রেজার দিয়ে নিয়মিত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনের বছর ছোনগাছা এলাকার প্রায় অর্ধেক যমুনা নদীতে চলে যাবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নাজমুল হোসাইন বলেন, গত ১৬ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি বেড়েছে ১৬১ সেন্টিমিটার। এর মধ্যে ২১ মে একদিনেই পানি বেড়েছে ৬৮ সেন্টিমিটার, যা ভাঙনকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। বর্তমানে যমুনা শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩০০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে পশ্চিম পাড়ের প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে ভাঙন এতটাই ভয়াবহ যে, নদী এসে ঠেকেছে রক্ষা বাঁধের একেবারে কাছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা- এই ধারা অব্যাহত থাকলে বসতঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজারসহ বিপুল জনগোষ্ঠীর জীবন হুমকির মুখে পড়বে।
ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোর নদী পাড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করলেও তার সাড়া মেলেনি।
তবে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নাজমুল হোসাইন বলেন, বালু উত্তোলনের মতো কোনো অভিযোগ পাইনি আমরা। এসব কিছু এসি ল্যান্ড দেখেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু দেখতে পেলে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আর ভাঙন কবলিত এলাকায় নিয়মিত বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফিফান নজমু বলেন, আমাদের কাছে বালু উত্তোলনের কোনো অভিযোগ নেই। জেলা প্রশাসক স্যার নির্দেশ দিলে আমি কিংবা ইউএনও স্যার সাথে সাথে অভিযান পরিচালনা করব।
তবে ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, বালুর বস্তা ফেলে কোনো লাভ নেই। বারবার একই দুর্যোগ তারা দেখেছেন। দরকার স্থায়ী বাঁধ এবং সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা। পাশাপাশি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে।
আরএআর