আকস্মিক টর্নেডোতে নোয়াখালীতে ৪ গ্রাম লণ্ডভণ্ড, দুর্ভোগে বহু পরিবার

নোয়াখালীতে আকস্মিক টর্নেডোতে সেনবাগ ও সুবর্ণচর উপজেলার চারটি গ্রাম লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। হঠাৎ আকাশ কালো করে বিকট শব্দে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়টি। এতে অর্ধ-শতাধিক বাড়িঘর, মসজিদ বিধ্বস্ত হয়, গাছপালা উপড়ে পড়ে, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বেশ কয়েকটি এলাকায়। সেনবাগে ঘর চাপা পড়ে কামাল হোসেনসহ (৪৫) দুইজন গুরুতর আহত হয়।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকালে উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর, দেবীসিংপুর, গোপালপুর এবং সুবর্ণচর উপজেলার পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নের হাবিবিয়া গ্রামের ওপর দিয়ে দুই থেকে তিন মিনিট স্থায়ী এ টর্নেডোর আঘাতে এ সব ক্ষয়ক্ষতি হয়।
জানা গেছে, ঘণ্টায় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে টর্নেডো আঘাত হানে। ঝড়ের সঙ্গে ভারী বৃষ্টিও হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তোলে। এতে চার গ্রামের বেশ কিছু বড় বড় গাছ উপড়ে গিয়ে বাড়ির ওপর পড়ে। মুহূর্তেই অর্ধ-শতাধিক বসতঘর ধসে পড়ে এবং বহু গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাত্র কয়েক মিনিট স্থায়ী হলেও টর্নেডোর তাণ্ডব ছিল ভয়াবহ। বহু ঘরবাড়ির টিন উড়ে গেছে, গাছ পড়ে ঘর ধসে পড়েছে, ঘরের ছাউনি উড়ে গেছে। অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়ায় সড়ক ও গ্রামীণ পথঘাট বন্ধ হয়ে যায়।

নবীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আমিন উল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুই থেকে তিন মিনিট স্থায়ী এ আকস্মিক টর্নেডোর আঘাতে বিষ্ণুপুর গ্রামের আটটি, দেবীসিংপুর গ্রামের সাতটি এবং গোপালপুর গ্রামের ছয়টি বসতঘর সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়। তাছাড়া আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ৩০টি বসতঘর। এসময় বহু গাছপালা উপছে পড়ে এবং বিদ্যুৎ লাইনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। যার ফলে টর্নেডোর পর থেকে এ সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
সুবর্ণচরের ক্ষতিগ্রস্ত এক বাসিন্দা নুর নবী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমন ঝড় আগে দেখিনি। ঝড়টা এত দ্রুত এসেছিল যে কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার ঘরের ওপর বড় গাছ পড়ে গেল। আমরা কোনোমতে প্রাণ নিয়ে বের হতে পেরেছি।
নুর মাওলা নামে ক্ষতিগ্রস্ত আরেক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্তরা সবাই কৃষক ও দিনমুজুর। বসতঘর ছাড়াও গ্রামের অসংখ্য গাছপালা ভেঙে গেছে। এতে ওই সব কৃষক ও দিনমজুরদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। পরিবার নিয়ে এখন অনেকেই খোলা আকাশের নিচে আছে।
সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিন ও সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাবেয়া আফসার সায়মা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে স্থানীয়ভাবে এ ধরনের টর্নেডো সৃষ্টি হতে পারে। আমরা বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে লোক পাঠিয়েছি। পরবর্তীতে সরেজমিনে দেখে এসেছি। টর্নেডোতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।
হাসিব আল আমিন/আরকে