‘টেস্ট-ওষুধ সবই বাইরে থেকে আনতে হয় বাজান’

বরগুনার বদরখালি ইউনিয়নের বাসিন্দা রিপন হাওলাদার। ছেলেকে নিয়ে বরিশালে এসেছেন ডেঙ্গু চিকিৎসা করাতে। চারদিন আগে ছেলেকে নিয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসা প্রক্রিয়া দেখে হতাশ এই বাবা।
ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন ভর্তি করানোর পর অনেকগুলো টেস্ট করাতে বলে। টেস্ট লিখে দেওয়ার সময় ডাক্তারই বলে দেন, বাইরের ক্লিনিক থেকে টেস্ট করাতে। সেখানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা গেছে। হাসপাতালে টেস্টগুলো করাতে পারলে এত টাকা যেত না।’
একদিন পরেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে বরিশাল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। রিপন হাওলাদার বলেন, ‘ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পরপরই নাম কাইট্টা দিয়া কইলো, বরিশাল যান। তহন হাতে টাহা (টাকা) নাই। ওদিকে পোলার টিটমেনও (ট্রিটমেন্ট) লাগবে। শেষে কর্জ কইরা (টাকা ধার করে) বরিশাল আইছি।’

রোগীদের হয়রানি ও অভিযোগের চিত্র
এমন অভিযোগ যে শুধু রিপন হাওলাদারের, তা নয়। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে প্রায় সকলেই এমন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে জানান ডেঙ্গু রোগী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা নিতে বরগুনা হাসপাতালে যাওয়া মানে আরেক ফাঁদে পড়া। ডেঙ্গু পজিটিভ আসার পরও আমার শরীরে তেমন অসুস্থতা ছিল না। হালকা হালকা জ্বর আসত। কৌতূহলবশত টেস্ট করাতে গিয়ে দেখি ডেঙ্গু পজিটিভ।’
‘রিপোর্ট নিয়ে বরগুনা হাসপাতালে যখন যাই, তখন শরীরে প্লাটিলেট ছিল ৫৬ হাজার। একদিন সেখানে রেখে বরিশাল রেফার্ড করে দেয়। আমার শরীরের অবস্থা যে খুব বেশি খারাপ নয়, তা জানিয়েই ডাক্তার বরিশাল পাঠায়। বরগুনার চিকিৎসকরা খুব যে আন্তরিক, তা বলা যাচ্ছে না। মুখে যতই বলুক, রোগী বলতে পারবেন কী সেবা পাচ্ছে সেখানে! ডেঙ্গু শনাক্ত হলেই একদিন পর বরিশাল পাঠিয়ে দায়মুক্ত হন তারা।’
ছেলের শুশ্রূষা করতে করতে পাশের বেড থেকে আলো রাণী বলেন, ‘বরগুনা হাসপাতালের প্রেসক্রিপশন দেখেন, ৮/১০টা ওষুধ লিখেছে। হাসপাতাল থেকে দিত শুধু নাপা ট্যাবলেট। অন্যান্য ওষুধ-টেস্ট বাইরে থেকে আনতে হতো বাজান। ওইটা শুধু নামেই সরকারি হাসপাতাল (বরগুনা)।’

তিনি আরও বলেন, ‘রোগীর অবস্থা খারাপ হলেও নার্স আর ডাক্তার রোগীর কাছে আসে না। কিছু বলতে গেলে প্রেসক্রিপশন নিতে বলে। এতবার বলেছি আমার ছেলেকে একটু দেখতে, তারা আসেনি। প্রেসক্রিপশন দেখে নতুন নতুন ওষুধ দেয়। এরপর যখন দেখি খিঁচুনি কমছে না, তখন বরিশাল নিয়ে আসছি। আমার ছেলে এখন অনেক সুস্থ।’
পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়ার এক রোগী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘বরগুনার ডাক্তার রোগীদের কোনো কথাই শোনেন না। কোনো পরামর্শ দেন না, ডাকলে পাওয়া যায় না। হাসপাতালে গেলেই বাইরে থেকে প্লাটিলেট টেস্ট করে আনতে বলেন। আর প্লাটিলেট কমতে শুরু করলে বরিশাল রেফার্ড করে দেন। ওখানকার ডাক্তার যে কজন আছেন, তারা শুধু রেফার্ড করতেই বসে আছেন।’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রেজওয়ানুর আলমের মোবাইলে বেশ কয়েকবার কল দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি। তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাজকিয়া সিদ্দিকাহ বলেন, ‘ডেঙ্গু শনাক্তকরণ টেস্ট করাতে আমাদের কোনো সমস্যা হয় না। তবে, ভর্তি রোগীদের প্লাটিলেট পরীক্ষা দিনে ৭০/৮০টা পর্যন্ত করতে পারি। হাসপাতালে সিবিসি মেশিন একটি। মেশিনটির ওপর ২০০টি টেস্ট চাপিয়ে দিলে তো তা কাজ করবে না।’

‘কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। তা সত্ত্বেও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি রোগীদের চিকিৎসা দিতে।’
বরগুনায় এখন পর্যন্ত আড়াই হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল।
এমএআর/