পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, ফলাফল স্থগিতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

বিশৃঙ্খলাসহ নানা অভিযোগ তুলে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির অনুষ্ঠিত সম্মেলনের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল (রোববার) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী।
পয়গাম আলী বলেন, দ্বি-বাষিক সম্মেলনের প্রার্থী অ্যাড. মো. সৈয়দ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ড. টিএম মাহবুবর রহমানের নেতৃত্বে তাদের উশৃঙ্খল সমর্থকরা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিনকে লক্ষ্য করে লাঠিসোঠা এবং চেয়ার দিয়ে হামলা এবং তাকে বহনকারী গাড়ি ভাঙচুর করেন। এক পর্যায়ে জেলা থেকে আগত নেতৃবৃন্দ তাকে রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা করে এবং তারাও আহত হন।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু লিখিতভাবে ভোটের ফলাফল প্রদান করা হয়নি। তাই বিশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ফলাফল স্থগিতের ঘোষাণা করা হয়েছে।
অন্যদিকে নির্বাচনের ফলাফল স্থগিতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বালিয়াডাঙ্গী শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। পরে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির দ্বি-বাষিক সম্মেলনের সভাপতি প্রার্থী অ্যাড. মো. সৈয়দ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ড. টিএম মাহবুবর রহমান একটি সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করে বলেন, জেলা বিএনপি যে ফলাফল স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। যারা রাতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে আবার দিনে স্থগিত করে তা আমরা মানি না। তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে পারেনি বলেই বিভিন্ন টালবাহান করছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভাই ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিনের গাড়িবহরে হামলার জন্য জামায়াত ও আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন নবনির্বাচিত উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ড. টিএম মাহবুবর রহমান। তিনি বলেন, এটি তার জনপ্রিয়তা ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার সুপরিকল্পিত অপচেষ্টা।
তারা আরও বলেন, “সবার জানা আছে, ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন মির্জা রুহুল আমিন চাচা। তার উত্তরসূরি হিসেবে মির্জা ফয়সল আমিন নির্বাচন করতে পারেন এ সম্ভাবনায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে হামলা চালানো হয়েছে। জামায়াত-আওয়ামী লীগের লোকজন এতে জড়িত থাকতে পারে বলে আমাদের ধারণা।’’
বিএনপির অভ্যন্তরে কোনো বিভাজন নেই দাবি করে ড. টিএম মাহবুবর ও সৈয়দ আলম বলেন, “বিএনপির কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। সম্মেলন অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে কোনো বিরোধ বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি। বরং সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, এটি আসন্ন সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পূর্বপরিকল্পিত হামলা।
অপরদিকে বিএনপির সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিনের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সভাপতি পদপ্রার্থী আবু হায়াত নুরুন্নবী ও তার অনুসারীরা।
রাতে ওই উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নে লাহিড়ী বাজারে কাউন্সিলদের একাংশ এবং চাড়োল ইউনিয়ন বিএনপির নেতারা এ আয়োজন করেন। বিএনপির মহাসচিবের ভাইয়ের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সভাপতি পদপ্রার্থী আবু হায়াত নুরুন্নবী ঘটনার সাথে জড়িতদের বহিষ্কার এবং ভোট আবার গণনা করে ফলাফল প্রকাশের দাবি জানান।
তিনি বলেন, যারা বিএনপির দ্বি-বাষিক সম্মেলনের শীর্ষ নেতাদের ওপর হামলা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং দ্বি-বাষিক সম্মেলনের ফলাফল স্থগিত করতে হবে।

আরও পড়ুন
দীর্ঘ ৮ বছর পর ভোটের মাধ্যমে ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির দ্বি-বাষিক সম্মেলন হয়। ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফল প্রকাশে বিলম্বিত হলে ক্ষুদ্ধ হন উপজেলার নেতাকর্মীরা। কারচুপির অভিযোগ তুলে ওই উপজেলা সমির উদ্দিন স্মৃতি মহাবিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নেন তারা। এতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এ সময় মৌখিক ফল ঘোষণা দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের ছোট ভাই জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিনসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা বের হতেই হামলা চালান উপজেলার নেতাকর্মীরা। এতে আহত হন চারজন।
রেদওয়ান মিলন/এনএফ