মা ও বোনের ইচ্ছায় ঢাকাতেই দাফন করা হবে জারিফকে

রাজধানীর উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থী জারিফ ফারহান (১৩) অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানল। চারদিন ধরে বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করছিল শিশুটি। অবশেষে মৃত্যুর কাছে হেরে গেল। শনিবার (২৬ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে। তার মৃত্যুর বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন বাবা হাবিবুর রহমান লিটন।
জারিফ ফারহান হাবিবুর রহমান লিটন ও রাশিদা ইয়াসমিন দম্পতির ছেলে। তারা বর্তমানে ঢাকার উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরে থাকে। তাদের গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের হোসনাবাদ গ্রামে।
মৃত জারিফের বাবা মো. হাবিবুর রহমান লিটন জানান, তাদের বাড়ি রাজবাড়ীর সদর উপজেলার শ্রীপুর এলাকায়। তার ২ ছেলে-মেয়ের মধ্যে জারিফ ছিল ছোট। মাইলস্টোন স্কুলের ৭ম শ্রেণিতে ইংলিশ ভার্সনে পড়ত সে। চার দিন ধরে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়েছে। জারিফের শ্বাসনালীসহ শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। ক্রিটিকাল অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে ছিল সে। চিকিৎসকরা প্রাণপণ চেষ্টা করেছে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু মৃত্যুর কাছে হেরে গেছে জারিফ। আজ সকালে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় জারিফের মৃত্যু হয়। মরদেহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে।
তিনি আরও বলেন, জারিফের দাফন করা হবে ঢাকার উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে। ১২ নম্বর সেক্টরের খাল পাড় জামে মসজিদে বাদ আছর তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে মসজিদের পাশেই একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী হলেও আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঢাকাতে। তাই আমি দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে ঢাকাতেই থাকি। আমার ইচ্ছে ছিল জারিফের মরদেহ রাজবাড়ীতে নিয়ে যাব। কিন্তু জারিফের মা ও বোনের ইচ্ছায় তাকে ঢাকাতে দাফন করা হবে। একমাত্র আদরের ছেলেকে তার মা দূরে রাখবে না। তাই ঢাকায় আমাদের উত্তরার বাড়ির পাশেই দাফন করা হবে।
জারিফের পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সকালে জারিফের মা তাকে স্কুলে রেখে আসতেন। ঘটনার দিনও স্কুলে রেখে বাসায় চলে আসেন তিনি। জারিফের একাই বাসায় ফেরার কথা ছিল সেদিন।
স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় জারিফের পরিবার। কিন্তু কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না জারিফকে। পরে দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তার বাবা হাবিবুর রহমান লিটনকে ফোন করে জানানো হয়, জারিফকে দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। অবস্থা গুরুতর। তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। এরপরই বাবাসহ জারিফের পরিবারের সদস্যরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। জারিফের শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ ছিলো। গত মঙ্গলবার বিকেল থেকেই আইসিইউতে ছিল জারিফ।
এ বিষয়ে রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. এস এম মাসুদ বলেন, ঢাকার মাইলস্টোন ট্রাজেডির ঘটনায় রাজবাড়ীর ছেলে জারিফ মারা গিয়েছে। তার দাফন ঢাকার উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে হবে। আমি জানাজায় অংশগ্রহণ করব।
গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজেআই বিমানটি দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়নের ১২ মিনিটের মাথায় ১টা ১৮ মিনিটে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ জনে। এ দুর্ঘটনায় রাজধানীর সাতটি হাসপাতালে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে প্রায় অর্ধশত আহত ও দগ্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থী। নিহতদের মধ্যে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১৭ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১৫ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে একজন, লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে একজন (অজ্ঞাতনামা) এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে একজন মারা গেছেন।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এমএএস