‘জুলাই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা না দিতে প্রশাসনের চাপ ছিল’

মানিকগঞ্জে গত বছরের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা না দিতে প্রশাসনের সকল পর্যায় থেকে চাপ ছিল। ওই সময় আহদের ভর্তি রাখতে পারিনি। আমাদের কাছে ডিবি, এনএসআই, ডিজিএফআইসহ প্রশাসনের লোকজন ওই দিন (১৮ জুলাই ২০২৪) বিকেলে হাসপাতালে আসে। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া নিয়ে চাপের মুখে পড়তে হয়েছিল আমাদের।
সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বাহা উদ্দিন জুলাই পুনর্জাগরণ আলোচনা সভায় বক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা সদর হাসপাতালের আয়োজনের এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বাহা উদ্দিন বলেন, ছাত্র আন্দোলনের সময় গুরুতর আহত হয়েছিল জুলাইযোদ্ধা শিক্ষার্থী হাসনা হেনা। তিনি আহত হয়ে আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলে আমরা তাকে ভর্তি করি। তবে তাকে কেন ভর্তি রেখেছি এবং চিকিৎসা না দিয়েই তাকে রিলিজ দিতে হবে বলে আমাদের ওপর চাপ দেন। হাসনা হেনাকে ছুটি না দিলে তার বাবাকে হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও বলা হয়। আমিসহ হাসপাতালের ওই সময়ের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুজিতসহ অনেককেই হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।
আলোচনা সভায় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ১৮ জুলাই মানিকগঞ্জে গুরুতর আহত অবস্থায় অনেক শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মাঝে অন্যতম ছিল নারী নেত্রী হাসনা হেনা। তাকে জরুরী বিভাগের চিকিৎসা শেষ করে ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছিল। তাকে ওয়ার্ড থেকে রিলিজ দিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোড় চাপ আসতে থাকে আমাদের কাছে। পরে আমরা তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করি এবং বিষয়টি হাসনা হেনাকে জানাই। তবে তিনি কোনোভাবেই চিকিৎসা না নিয়ে হাসপাতাল ছাড়তে চাইছিলেন না। আমরা তখনকার যারা হাসপাতালে কর্তব্যরত ছিলাম তারা শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য শক্ত অবস্থানে ছিলাম।
আলোচনা সভায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বাহাউদ্দিনের সভাপতিত্বে সিভিল সার্জন ডা. মো. খুরশীদ আলম, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের ইন্সপেক্টর (প্রশাসন ও অর্থ) মো. জাকির হোসেন, জেলা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (সমমান) ডা. বদরুল আলম চৌধুরী, মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক শাহানুর ইসলাম, জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রীড়া সাংবাদিক আব্দুল মোমিন, সিনিয়র স্টাফ নার্স ও মানিকগঞ্জ ন্যাবের সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন, জুলাই আন্দোলনে আহত নেত্রী হাসনা হেনা, ছাত্র প্রতিনিধি ওমর ফারুক ও নাহিদ মনিরসহ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং নার্সরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভা শেষে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত এবং আহত সকলের প্রতি দোয়া করা হয়।
সোহেল হোসেন/এমএএস