আদালত চত্বরে স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি

ফরিদপুরে ইজিবাইক চালক শওকত মোল্লা (২০) হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ সময় আদালত চত্বর থেকে পুলিশ পাহারায় কারাগারে নেওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন আসামিরা। শহরের রবিদাস পল্লির বাসিন্দা আসামি রাজেশ রবি দাস (২৯) এ সময় তার স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার শরীরে এ সময় ডাণ্ডাবেড়ি লাগানো ছিল। পুলিশ পরে তাকে কারাগারে নিয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে ফরিদপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মাকসুদুর রহমান মামলার রায় দেন।
রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একজন বাদে বাকি সকল আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদের পুলিশ পাহারায় জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর মহল্লার মো. মেহেদী আবু কাওসার (২৫), মো. জনি মোল্লা (৩০) ও মো. আবু রাসেল শেখ (২৫) (পলাতক), শহরের রবিদাস পল্লির রাজেশ রবি দাস (২৯), গোয়ালচামট মহল্লার মো. রবিন মোল্লা (২৫)।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সকল আসামিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। এই জরিমানার অর্থ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পরিশোধ করতে হবে।
অপরদিকে ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে রাজবাড়ীর সদরের মসলিসপুর গ্রামের মো. বাদশা শেখকে (৩১)। পাশাপাশি তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও ১০ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড ভোগ করতে হবে।
আদালত সুত্রে জানা যায়, নিহত শওকত মোল্লা (২০) শহরের পশ্চিম খাবসপুর এলাকার মো. আয়নাল মোল্লার ছেলে। তিনি ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর শওকত মোল্লা ইজিবাই নিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। পরদিন ১৫ নভেম্বর সকালে শহরের মোল্লা বাড়ি সড়কের শেষ মাথায় ফরিদপুর শহর বাইপাসের কাছে আবুল হোসেনের ধানক্ষেতে তার লাশ গলায় বেল্ট পেচানো অবস্থায় পাওয়া যায়।
নিহত শওকতের বাবা মো. আয়নাল মোল্লা ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয় তার ইজিবাই চালক ছেলেকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা দামের ইজিবাইক ও মুঠোফোনটি দিয়ে যায় হত্যাকারীরা। এ মামলাটি তদন্ত করেন ফরিদপুর কোতয়ালি থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আক্তার। তিনি ২০২০ সালের ২০ আগস্ট উল্লেখিত ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দুপুর দেড়টার দিকে ফাঁসির রায় ঘোষণা হওয়ার পর দুই তলা আদালত ভবন থেকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে নিচে নামানো হয় ফাঁসির আসামিদের। এরপর আদালত ভবনের সিঁড়ির নিচ থেকে পুলিশ ভ্যানে উঠানোর জন্য হাঁটিয়ে নেওয়া হচ্ছিল তাদের। এ সময় দশ জনের মতো পুলিশ ছিল তাদের পাহারায়। আদালত ভবনের সিঁড়ি থেকে পুলিশ ভ্যানের দূরত্ব ছিল আনুমানিক ৩০ গজ। এ সময় পথের মাঝামাঝি এসে ফাঁসির আসামি রবিদাস পল্লির রাজেশ রবি দাস (২৯) তার স্ত্রীর দিকে তাকান। পরে তার স্ত্রী এগিয়ে এলে তাকে বুকে টেনে নেন স্বামী। এরপর পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের ওপর ক্ষেপে যান রবি দাস। পরে সব আসামিকে পুলিশ ভ্যানে করে জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
আদালতের সরকারি পক্ষের অতিরিক্ত কোঁসুলি চৌধুরী জাহিদ হাসান বলেন, এ রায় একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ রায়ের ফলে সমাজে এ জাতীয় অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে এবং অপরাধ করে যে পার পাওয়া যায় না তা প্রমাণ হলো। আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট।
আসামিপক্ষের আইনজীবী নারায়ণ চন্দ্র দাস বলেন, এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নয়। আমরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হব। সেখানে আমরা ন্যায় বিচার পাব বলে আমরা আশাবাদী।
জহির হোসেন/আরএআর