‘দু’মাস অনেক কষ্টে গেছে, আরও এক মাস কীভাবে চলবে জানি না’

‘দু’মাস অনেক কষ্টে গিয়েছে, সামনে আরও এক মাস কীভাবে চলবে জানি না’—এমনই হতাশা আর দুশ্চিন্তা ঝরে পড়ছে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলের জেলে ও বাওয়ালিদের কণ্ঠে। সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া আহরণে জারি থাকা তিন মাসের মৌসুমী নিষেধাজ্ঞার দুই মাস ইতোমধ্যে পার হলেও এখনো তাদের জীবিকা অনিশ্চিত।
প্রতিবছরের মতো এবারও ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে সব ধরনের জলজ প্রাণী আহরণ নিষিদ্ধ রয়েছে। মূলত প্রজনন মৌসুমে মাছ, কাঁকড়া ও অন্যান্য প্রাণীর বংশবিস্তার নিশ্চিত করতেই এই নিষেধাজ্ঞা। তবে এই নিষেধাজ্ঞা স্থানীয়দের জীবনে যেন রীতিমতো অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে।
শ্যামনগরের জেলে মাছুম বিল্লাহ বলেন, নিষেধাজ্ঞা তো ঠিক আছে, কিন্তু পরিবার তো আর থেমে থাকে না। দু’মাস অনেক কষ্টে গিয়েছে। ঋণ করে সংসার চালাতে হচ্ছে। সামনে আরও এক মাস কীভাবে চলবে জানি না।
গাবুরার বাওয়ালি নুর মোহাম্মদ বলেন, সহায়তা চাইলেও সবাই পায় না। কিছু পরিবার পায়, কিন্তু সংখ্যাটা খুবই কম। আমরা চাই বিকল্প আয়ের পথ। তাহলে বনের ক্ষতিও হবে না, আমরাও বাঁচব।
এদিকে বন বিভাগ জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে টহল ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, নিষেধাজ্ঞার দুই মাসে ইউডিওআর ও পিওআর আইনে বেশ কিছু মামলা করা হয়েছে। নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্মার্ট পেট্রোল টিম নিয়মিত টহল দিচ্ছে।
তবে শুধু আইনি কড়াকড়ি নয়, স্থানীয়দের জীবিকা নির্বাহের টেকসই ব্যবস্থা না থাকলে প্রতি বছর একই চিত্রের পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদী ও স্থানীয় উন্নয়নকর্মীরা।
তাদের মতে, বন ও প্রাণী রক্ষায় জেলেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে প্রয়োজন যথাযথ সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও বিকল্প আয়ের বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা। নয়তো একদিকে বাঁচবে বনের প্রাণী, আর অন্যদিকে বিলীন হবে বনের আশপাশে বসবাসরত হাজারো মানুষের মানবিক জীবন।
ইব্রাহিম খলিল/আরকে