মেহেরপুরে গাড়ল ও দুম্বার সংকরায়ণে নতুন জাত উদ্ভাবন

গাড়লের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের প্রাণী দুম্বার সংকর ঘটিয়ে নতুন জাতের দুম্বা উদ্ভাবন করে সাড়া ফেলেছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভোমরদা গ্রামের আসাদুজ্জামান। তিনি ২০২০ সালে প্রবাস থেকে দেশে এসে প্রথমে গরুর খামার শুরু করেন। পরে ৪০টি গাড়ল ও ৩০টি ছাগল নিয়ে খামার তৈরি করে খুব একটা লাভের মুখ দেখেতে না পেয়ে ৭ লাখ টাকা দিয়ে নাটোর থেকে ৪টি দুম্বা ক্রয় করে। গাড়ল ও দুম্বার সংকরায়ণের মাধ্যমে নতুন জাতের দুম্বা উৎপাদন করছেন তিনি।
বর্তমানে তার খামারে ৮০টি ক্রস দুম্বার বাচ্চা, ৮০টি মা গাড়ল ও ৪টি তুর্কি দুম্বা রয়েছে। যেখান থেকে নতুন জাতের দুম্বার বাচ্চা বিক্রি করে মাত্র দেড় বছরে আয় করেছেন ৮ লাখ টাকা। তৈরি করেছেন স্বপ্নের পাকা বাড়ি। চারণভূমির কাঁচা ঘাস, লতা-পাতা, বিচালি, গম ও ভুট্টার ভুসি খেয়ে বেড়া ওঠা ক্রসের বাচ্চা দেখতে নাদুস-নুদুস, রয়েছে ছোট্ট একটি লেজ, পেছনের অংশ চেপ্টা, কারো কারো মাথায় আছে শিং।
খামারি আসাদুজ্জামান বলেন, যেখানে ৬ মাস বয়সী একটি গাড়লের ওজন হয় ১৪ থেকে ১৬ কেজি, দাম ৭-৮ হাজার, সেখানে একই বয়সের ক্রস জাতের দুম্বার ওজন হয় ৩০ থেকে ৩৫ কেজি, যার দাম ২৫-৩৫ হাজার টাকা।
নতুন জাতের দুম্বা পালনে লাভ বেশি। খুব সহজে অসুস্থ হয় না।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে সরকারিভাবে লোন কিংবা সহোযোগিতা পাইনি। তবে বর্তমানে খামারে গাড়ল ও ক্রস দুম্বা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে খামারটি বড় করতে চাই।
বেকার যুবকদের উদ্দেশে আসাদুজ্জামান বলেন, বিদেশ কিংবা চাকরির পেছনে না ছুটে, দেশেই গাড়ল ও দুম্বার ক্রসিং অবলম্বন করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।
আসাদুজ্জামানের প্রতিবেশী আনারুল ইসলাম বলেন, আসাদ কয়েক বছর ধরে গাড়ল এবং ক্রস দুম্বা পালন করেন। তার এই খামার আমার বেশ ভালো লাগে আর ভালো লাগাকে কেন্দ্র করে আমি তার খামার থেকে ১০টি গাড়ল কিনেছি। প্রায় দুই বছরে আমার ছোট খামারে ৩৯টি গাড়ল রয়েছে।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রথমে আমরা আসাদকে উৎসাহ দেই। ধীরে ধীরে তার খামার বড় হতে থাকে। প্রতিনিয়ত খামার থেকে গাড়ল ও দুম্বার বাচ্চা কিনতে অনেকে আসে। আসাদ এখন আর্থিক দিক থেকেও সচ্ছল। দেশের যারা বেকার তারা যদি এমন খামার দিতে পারে তাহলে তাদের বিদেশ যাওয়ার আর প্রয়োজন নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা মুজাম্মেল হক বলেন, খামারের ক্রস জাতের দুম্বা দেখতে অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে আসছে। অনেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে আমিও গাড়ল ও দুম্বার সংকরায়ণে এমন খামার দেব।
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোত্তালিব আলী জানান, দুম্বার সাথে গাড়লের ক্রসিং করার কারণে সামনের দিকটা ভেড়ার মত হলেও পেছনের দিকটা দুম্বার বৈশিষ্ট্য বহন করছে এবং বাচ্চাগুলো অন্যান্য গাড়লের থেকে বড় ও মাংসের উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণে অন্যান্য খামারিদের মধ্যে এটি একটি চাহিদা তৈরি করেছে। আসাদুজ্জামান বাচ্চাগুলো বিভিন্ন খামারিদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা তার খামার পরিদর্শন করেছি। তাকে সব ধরনের পরামর্শ, ভ্যাকসিন ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিচ্ছি। আমরা চাই তার মাধ্যমে এই খামার ছড়িয়ে যাক।
তরিকুল ইসলাম/আরএআর