এ বছর পাটের রং ও দামে খুশি চাষিরা

রাজশাহীতে এ বছর পাটের চাষবাদ ভালো হয়েছে। সময় মতো কাটা ও জাগ দেওয়ার কারণে ভালো হয়েছে পাটের রং। ভালো রং ও দাম পেয়ে খুশি চাষিরা। বর্তমানে পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন পাটচাষিরা।
চাষিরা বলছেন, পাট জাগ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি পাওয়া গেছে। বৃষ্টিপাতের ফলে আগে থেকে পুকুর, খালে পানি জমে ছিল। ফলে জাগ দেওয়ার আলাদা খরচ সাশ্রয় হয়েছে তাদের।
রাজশাহীর জুট মিল সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজশাহীতে ৬টি জুট মিল রয়েছে। এসব জুটমিলে মৌসুমে ৮ লাখ মণ পাট কেনা হয়। এ পাট জেলার চাষিদের উৎপাদিত। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর পাটের রং ও মান ভালো হয়েছে। তাই ভালো দামও পাচ্ছেন চাষিরা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ বছর রাজশাহী জেলায় বেড়েছে পাটের চাষ। গেল বছরের তুলনায় ২৯৮ হেক্টর জমিতে বেড়েছে পাটের চাষ। চলতি বছরে জেলায় ১৭ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। গেল বছর জেলায় ১৭ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছিল। গেল বছরের তুলনায় এবার পাটের চাষাবাদ ভালো হয়েছে। চাষিরা ভালো দামে বাজারে বিক্রি করতে পারছেন।
মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌর এলাকার হরিদাগাছির পাট চাষি জসিম উদ্দীন বলেন, এবছর পাটের জমি পর্যাপ্ত বৃষ্টির পানি পেয়েছে। অনেক জমিতে পানি জমে গেছে। অনেকেই জমি থেকে কেটে সেখানেই জাগ দিচ্ছেন। কেউ কেউ পুকুর বা ঢোবায় জাগ দিচ্ছেন। জাগ দেওয়া নিয়ে সমস্যা নেই। পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা আছে। পাট রোদে শুকানোর পরে রঙটাও ভালো দেখাচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে লালচে রং দেখা গেছে। কিন্তু এবছর লালচে রঙ কম। আশা করা যাচ্ছে পাটের উৎপাদন ভালো হবে।
মোহনপুর উপজেলায় আদর্শ কৃষক হাজি আবদুর রফিক বলেন, দাম ভালো ছিল তাই টাকা উঠে এসছে গেছে। এখন ফসলি জমি কমে গেছে, শ্রমিকের মজুরিসহ সবকিছুর দাম কয়েক গুণ বাড়লেও আনুপাতিক ভাবে পাটের দাম বাড়েনি। এজন্য পাটচাষ করে খুব লাভ হচ্ছে না। পাটের তৈরি পণ্যের ব্যবহার বাড়লে পাটচাষিরা আবারও সুদিন ফিরে পাবে।
দুর্গাপুর পৌর এলাকার বহরমপুর গ্রামের পাট চাষি রুবেল বলেন, ‘এ বছর ১ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। এক বিঘা জমি থেকে ১২ মণ পাট পাওয়া গেছে। গত বুধবার দুর্গাপুর সিংগা হাটে দুই মণ পাট বিক্রি করেছি ৩ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে। এমন দাম থাকলে আগামী বছর পাটের চাষ বাড়বে।’
চৌবাড়ীয়া গ্রামের পাট চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পরে এবারে পাটের দাম পাওয়া গেল। গত কয়েক বছর থেকে পাট চাষ করে শ্রমিকের খরচ উঠতো না। গত বছর পাট বিক্রি করেছি ১৫০০ টাকা মণ হিসেবে। এ বছরে পাট বিক্রি করেছি ৩ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে।’
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, পাট এ দেশের সোনালী ফসল। বিগত সময় পাটের দাম কম হওয়াই চাষ কিছুটা কমলেও বর্তমানে দাম ভাল। চলতি মৌসুমে পাট চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছে। আগামী বছরে পাটের চাষের পরিমাণ বাড়তে পারে।
জেলা দুর্গাপুরে পাট ব্যবসায়ী বকুল ইসলাম জানান, তিনি তাহেরপুর বাজারে প্রকারভেদে ৩ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৭০০ টাকা মণ হিসেবে পাট কিনেছেন। তিনি নওহাটা জুট মিলের জন্য ৩ ট্রাক পাট কিনেছেন।
পাট ব্যবসায়ী নয়ন বলেন, ‘আমরা রাজশাহীর বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে পাট কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাই। বিগত বছরের চেয়ে এবছরে পাটের দাম বেশি। আমি বুধবার দুর্গাপুর সিংগা হাটে পাট কিনেছি ৩ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে।’
হাসান জুট ইন্ডাস্ট্রির মালিক হাসান আলী বলেন, রাজশাহীতে ৬টি জুট মিল রয়েছে। এই জুটমিলগুলো মৌসুমে ৮ লাখ মণ পাট কেনে। এসব পাঠগুলো আমাদের রাজশাহী জেলার চাষিদের উৎপাদন করা। এ বছর পাটের দাম ভালো ও রংও ভালো হয়েছে। অনেক সময় লালচে রং হয় পাটের। কিন্তু এবার পাটের রং সাদা ও উজ্জ্বল।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, রাজশাহী জেলায় এ বছর ১৭ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। সম্ভাব্য উৎপাদন হবে ৪৭ হাজার ৪১৫ টন। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার ৩৮৫ টন। গত বছরের তুলনায় আবাদ এবং উৎপাদন দুইটাই বেশি হবে। এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাট জাগ দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। দাম ও ভালো আছে। আশা করি কৃষক লাভবান হবে।
শাহিনুল আশিক/আরকে