মধ্যরাতে টায়ার জ্বালিয়ে নোয়াখালী সড়ক অবরোধ

ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেছে ছাত্র-জনতা।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে জেলা শহরের টাউন হল মোড় এলাকায় পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসের সামনে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করা হয়।
এ সময় ছাত্র-জনতা ‘আমরা সবাই হাদি হবো, যুগে যুগে লড়ে যাবো’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, হাদি হত্যার বিচার চাই’, ‘আর নয় প্রতিরোধ, এবার হবে প্রতিশোধ’, ‘দিল্লি যাদের মামা বাড়ি, বাংলা ছাড়ো তাড়াতাড়ি’, ‘পেতে চাইলে মুক্তি, ছাড়ো ভারতভক্তি’, ‘সুশীলতার দিন শেষ, বিচার চাই বাংলাদেশ’—এমন নানা স্লোগান দেন।
পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তারা বলেন, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড ছিল সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। ঘটনার পর দীর্ঘ সময় পার হলেও এখনো হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই। অবিলম্বে দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
তাদের দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও আধিপত্যবাদ টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার না করা হলে আন্দোলনের কর্মসূচি আরও বিস্তৃত করা হবে বলে জানান তারা।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী সৈকত বলেন, জুলাইয়ে আমরা ভারতীয় আধিপত্যবাদকে এ দেশ থেকে বিতাড়িত করে যে সরকারের ওপর ভরসা করেছিলাম, সেই সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তারা ভারতের আধিপত্যের কাছে নতজানু হয়েছে। জুলাইয়ের শহীদরা এজন্য জীবন দেয়নি।
কলেজ শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। দীর্ঘ সময় পার হলেও এখনো খুনিদের গ্রেপ্তার না হওয়া প্রশাসনের ব্যর্থতার প্রমাণ। আমরা অবিলম্বে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
একই সময় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। পরে মিছিলটি মালেকে হলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনার চত্বরে এসে শেষ হয়। মিছিলজুড়ে বিভিন্ন স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বনি ইয়ামিন বলেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। যারা জুলাই যোদ্ধা আছেন, তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের বিচারের আওতায় আনুন। দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা চাই, যারা জুলাইবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
বিক্ষোভের শেষ পর্যায়ে শিক্ষার্থী মো. ইসহাক ওসমান হাদির আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। দোয়া শেষে তিনি ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এদিকে শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। তিনি বলেন, শরিফ ওসমান হাদির অকাল ও মর্মান্তিক মৃত্যুতে দেশ এক সাহসী কণ্ঠস্বরকে হারাল। নোবিপ্রবির পক্ষ থেকে তার রুহের মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
হাসিব আল আমিন/আরকে