ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল দশা, সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা

এক টানা ১৬ ঘণ্টার বৃষ্টিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। অকার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা, অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণ ও ময়লা-আবর্জনায় ড্রেনগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় এখন জলাবদ্ধতা নিত্যদিনের চিত্র।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের পুনিয়াউট, কাউতলী, শিমরাইলকান্দি, ফিসারী রোড, মেড্ডা, কুরুলিয়া, কলেজপাড়া, বঙ্গবন্ধু সড়ক, টেংকের পাড়—এসব জায়গার মানুষ আজ পানিবন্দি। হাঁটুর ওপরে পানি জমে গেছে রাস্তায়। কেউ কেউ কোমরে কাপড় গুটিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন, কেউ বা আবার সন্তানের স্কুলব্যাগ কাঁধে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পানি ঠেলে।
ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, শহরের ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ায় নোংরা পানি উপচে রাস্তায় উঠে আসে। অনেক সময় দিনের পর দিন পানি সরে না, দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং মশা, মাছি, পোকামাকড়ের উৎপাত বাড়ে।
তাছাড়া ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা কোমরে পানি নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। জলাবদ্ধতার জন্য রিকশাচালকরা সেসব এলাকায় যেতে চায় না। শুধু তাই নয় রাস্তায় যানজট, হর্ণের আওয়াজ আর মানুষের অতিষ্ঠ।
শহরের বাসিন্দা কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা জনি মিয়া বলেন, বছরের পর বছর ধরে আমরা শুধু আশ্বাসই শুনে আসছি। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তাগুলো ডুবে যায়। পায়ে হেঁটে চলা দায় হয়ে পড়ে। কাজীপাড়া এলাকার হমিওপ্যাথিক কলেজ থেকে পানি জমে থাকে। তাছাড়া গোকর্ণ রোড পুরোটাই হাঁটু সমান পানি।
মৌড়াইলের বাধন সাহা, খৈয়াসারে জিনদ মিয়া, কালিবাড়ি মোড়ের এলাকার সুভাষ পালের ভাষ্যও একই রকম।
কালবাড়ি মোড়ে এলাকার বাসিন্দা ও ব্যাবসায়ী কাইয়ুম মিয়া বলেন, ব্যস্ততম একটি এলাকার কালিবাড়ির মোড়। তবে বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। আর বৃষ্টির পানি দোকান পর্যন্ত চলে আসে। গতকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি পড়েছে। রাতে ছিল হাঁটু পানি। ব্যস্ততম একটি সড়কের পানি জমে থাকলে ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য সাধারণ পথচারীদের চলাচলে ব্যঘাত ঘটে।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ভোকেশনাল ও ট্যাকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রবেশ পথ থেকে হাঁটু পানি। শিক্ষার্থীরা পানি মাড়িয়ে স্কুলে প্রবেশ করছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ড্রেনেজ ব্যবস্থা পুরনো হয়ে গেছে। অনেক স্থানে বর্জ্য ফেলার কারণে ড্রেনগুলো কার্যকারিতা হারিয়েছে। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।
পৌর প্রশাসক শঙ্কর কুমার বিশ্বাস বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ড্রেনেজ সিস্টেমের অবস্থা খুবই নাজুক। এছাড়া রাস্তাঘাটগুলো তেমন ভালো নেই। গতকাল থেকে যে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে এতে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের পৌরসভার লোকজন গিয়ে ড্রেনগুলো পরিষ্কার করে দিচ্ছে। তবে জনবল সীমিত রয়েছে। এরপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি, পৌরসভার রাস্তা ও ড্রেনেজ কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে একটা প্রজেক্টের জন্য আবেদন করেছি। সেই প্রজেক্ট অনুমোদন হয়ে গেলে এসব কিছুর স্থায়ী সমাধান সম্ভব। তবে এখন শুধু আমরা রিপেয়ার করে যাচ্ছি।
পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি উঠেছে, দ্রুত কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিশ্চিত করে জনদুর্ভোগ কমানোর। নতুবা শহরজুড়ে জলাবদ্ধতা জনজীবনকে পুরোপুরি বিপর্যস্ত করে ফেলবে বলেই মনে করছেন সচেতন মহল।
মাজহারুল করিম/আরকে