তিন মাস পর খুলেছে সুন্দরবন, ঋণের বোঝা নিয়ে জেলেদের নতুন আশার যাত্রা

তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে উন্মুক্ত হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। বন্যপ্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুমে টানা ৯০ দিন বন্ধ থাকার পর আবারও জেলেরা মাছ ধরার এবং পর্যটকরা ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েই জেলেরা নতুন আশার যাত্রা শুরু করেছেন।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের জেলে আহমদ আলী ৩৫ বছর ধরে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল।
আহমদ আলী বলেন, “তিন মাস সুন্দরবন বন্ধ থাকায় সংসার চালানো খুব কষ্টের হয়ে গেছে। টাকা-পয়সা হাওলাদ করে চলেছি। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনাও থেমে গেছে। দোকানদারের কাছে ঋণও হয়েছে। এখন বন খুলে দেওয়ায় আশা ফিরেছে। আশা করি এবার ভালো মাছ ও কাঁকড়া ধরতে পারব, ঋণ শোধ করতে পারব এবং সংসার চালাতে পারব।”
তিনি আরও বলেন, বন্ধকালীন কিছু জেলেরা নিষিদ্ধভাবে বনে প্রবেশ করে বিষ দিয়ে মাছ ও কাঁকড়া ধরেছে। এতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা বৈধভাবে প্রবেশ করি, কিন্তু অন্যদের অবৈধ কার্যকলাপ আমাদের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলেছে।
আহমদ আলী সপ্তাহে কাঁকড়া ধরার জন্য ৮০০ টাকা, মাছ ধরার জন্য ১ হাজার টাকা ফি দিয়ে পাস নেন। তিনি বলেন, আমাদের এলাকার বেশিরভাগ মানুষ ঋণের বোঝা নিয়ে চলে। এবার প্রাপ্ত মাছ-কাঁকড়া আমাদের ঋণ শোধের পথ খুলবে। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা চালাতে পারব। সংসার সামলানো সহজ হবে।
একই এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, তিন মাস পাস বন্ধ থাকায় আমরা সন্তানদের পড়াশোনা, খাওয়াদাওয়া সবকিছু চালাতে হিমশিম খেয়েছি। দোকানদার ও বন্ধুবান্ধবের কাছে ধার করেছি। আজ পাস হাতে পেয়েছি, খুশি মনে সুন্দরবনে যাচ্ছি মাছ ধরতে।
রফিকুল ইসলাম জানান, “আমাদের জীবন সুন্দরবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এই তিন মাস পাস বন্ধ ছিল। আজ আবার পাস পেয়েছি, তাই বৈধ পথে মাছ ধরতে যাচ্ছি। তবে ভয়ও আছে—জলদস্যুদের অত্যাচার এখনও আছে। সরকার যদি নিরাপত্তায় আরও খেয়াল রাখতো, আমরা আরও নিরাপদে কাজ করতে পারতাম।”
শ্যামনগরের জেলে হোসেন গাজী বলেন, তিন মাস কোনো আয়ের পথ ছিল না। এবার মাছ-কাঁকড়া ধরার মাধ্যমে দোকানদারের কাছে ধার শোধ করার পরিকল্পনা আছে। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েই আমরা বনাঞ্চলে প্রবেশ করছি।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. ফজলুল হক জানান, প্রজনন মৌসুমে বন বন্ধ রাখা হয় যাতে জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। এখন জেলেরা বৈধ পাস নিয়ে নির্বিঘ্নে প্রবেশ করতে পারবেন। বন, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও রিভার পুলিশ যৌথভাবে তদারকি করছে।
এদিকে ট্যুরিস্ট পুলিশ জানিয়েছে, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমস্যা হলে সরাসরি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।
ইব্রাহিম খলিল/আরকে