খামারে চলছে পাঠদান, ইউএনও’র পরিদর্শনে বেরিয়ে এলো মাদরাসার ভয়াবহ অনিয়ম

চলতি বছর দাখিল পরীক্ষায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ১৫ শিক্ষকের ৪ ছাত্রীর কেউ পাস না করা মাদরাসাটি পরিদর্শনে গিয়ে ভয়াবহ অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শরীফপুর ইউনিয়নের দারুল ফালাহ বালিকা মাদরাসা পরিদর্শন করেন তিনি।
মাদরাসাটি পরিদর্শন শেষে ইউএনও ফেসবুক আইডিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেন,
‘একটি প্রতিষ্ঠান প্রধান ও কিছু অসাধু শিক্ষক কিভাবে একটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করতে পারে তা শরীফপুর ইউনিয়নের দারুল ফালাহ দাখিল বালিকা মাদ্রাসায় গেলে দেখতে পারবেন। প্রতিষ্ঠানটিতে ১৫ জন এমপিও ভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছে। গতবছর এই প্রতিষ্ঠান থেকে ৪ জন শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সবাই ফেল করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একটি মুরগি/গরুর খামারে ক্লাস চলছে। প্রতি শ্রেণির জন্য বরাদ্দ ১টি বা সর্বোচ্চ ২টি বেঞ্চ। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কয়েকমাস আগে উপজেলায় দেখা করতে এলে তাদের কতজন শিক্ষার্থী রয়েছে তার তথ্য দিতে বললে কেউ বলতে পারেনি। পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হওয়ার পর তাদের কোন ক্লাসে কতজন শিক্ষার্থী রয়েছে তার তালিকা জমা দিতে বললে তারা প্রায় ২৪০ জনের তালিকা দেয়। সরেজমিনে গিয়ে তৃতীয় শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত মাত্র ২৭ জন শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের শিক্ষকরা মিথ্যা বলা শিখিয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সকলে অবলিলায় মিথ্যা বলে। তাদের প্রতিটি কথাই মিথ্যা।

এই প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্তির সময় মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিল। টাকার বিনিময়ে যারা প্রতিষ্ঠাকালীন ছিল তাদের বাদ দিয়ে অন্যদের নিয়োগ দেয়। নিজস্ব জায়গা নিয়েও সমস্যা আছে। এলাকার মানুষের সঙ্গেও সম্পর্ক খারাপ।
একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মিথ্যার ওপর ভর করে কখনো চলা উচিত নয়। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কারণে অন্যদের বদনাম হয়। এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী দায়ী সকলের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এর আগে গত ১১ জুলাই অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট ডটকম 'নোয়াখালীতে ১৫ শিক্ষকের ৪ ছাত্রী, পাস করেনি কেউ' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান ও শামসুদ্দোহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই মাদরাসায় শিক্ষক আছেন, কিন্তু শিক্ষা নেই। এমন মাদসার কী প্রয়োজন? এটা আমাদের এলাকার জন্য লজ্জার ব্যাপার। মাদরাসার এমন খারাপ ফলাফলের জন্য দায়ী প্রধান মাওলানা ইমাম হোসাইন। তিনি দুর্নীতির রাজা। তার মধ্যে শুধুই অনিয়ম। তিনি মাদরাসার দাতা পরিবারের নামে মামলা করেছেন। দুধের শিশুও মামলা থেকে রেহাই পায় নাই। তিনি শিক্ষার্থী দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানাই।
অভিযোগ অস্বীকার করে মাদরাসার প্রধান মাওলানা ইমাম হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ভাড়া বাড়িতে ক্লাস নেই। ইউএনও স্যারের সব অভিযোগ মিথ্যা। আমাদের অনেক সমস্যা রয়েছে। তিনি সমাধান না করে আমাদের দোষী সাব্যস্ত করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাদরাসার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। যা তদন্ত হচ্ছে। আজকে মাদরাসায় গিয়ে অবাক হয়েছি। গোয়াল ঘরের একটা রুমে ৬ শ্রেণির শিক্ষার্থীর পাঠদান করাচ্ছেন। তারা নিজেদের রোল নম্বর পর্যন্ত বলতে পারে না। তিনি ২৪০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা জানালেও আমরা পেয়েছি মাত্র ২৭ জন। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে জানাব।
হাসিব আল আমিন/আরকে