আশপাশের মানুষ যা দেয়, তাই খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছি

মানুষ সাহায্য করলে দুবেলা দুমুঠো খাবার জোটে, না দিলে না খেয়ে থাকতে হয়। জীবনের শেষ সময়ে এসে শান্তির ঘর তো দূরের কথা, নানামুখী কষ্টই এখন সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে বৃদ্ধা ফজিলা বেগমের জন্য। থাকার কষ্ট, খাবারের কষ্ট সব মিলিয়ে তার জীবন এখন যেন এক নিঃশেষের অপেক্ষা।
বৃষ্টি হলেই তার জরাজীর্ণ ঘরে পানি পড়ে, ঠিকমতো ঘুমাতেও পারেন না। প্রায় এক যুগ আগে স্বামীকে হারিয়েছেন ফজিলা বেগম। দাম্পত্য জীবনে তার তিন ছেলে ছিল। বড় ছেলে ইফতেখার মারা যান ৫ বছর আগে এবং মেঝো ছেলে সোহেল মারা যান ৪ বছর আগে। ছোট ছেলে জুয়েল প্রতিবন্ধী। বর্তমানে এই প্রতিবন্ধী ছেলে এবং মেঝো ছেলের রেখে যাওয়া একমাত্র নাতনি জান্নাতকে (১০) নিয়ে একটি ভাঙাচোরা ঘরে বসবাস করছেন তিনি।
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের বাসিন্দা ফজিলা বেগম (৬০) মৃত ওমর ফারুকের স্ত্রী।
জানা যায়, ফজিলা বেগমের ঘরের টিনের চাল মরিচা পড়ে জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি ঘরের ভিতরে পড়ে। চারপাশের বেড়া ও দরজা-জানালাগুলো ভেঙে গেছে। বৃষ্টির পানি ঠেকাতে ঘরে দেওয়া হয়েছে পলিথিন ও পুরনো কম্বলের ছাউনি। একই অবস্থা শৌচাগারেও।
ফজিলা বেগম বলেন, আশপাশের মানুষ যা দেয়, তাই খেয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছি। একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসা তো দূরের কথা, গত ২২ বছরে তাকে তার পছন্দমতো কোনো খাবারও খাওয়াতে পারিনি। মেঝো ছেলে মারা গেছে ৪ বছর হলো, তার রেখে যাওয়া একমাত্র মেয়ে জান্নাতকে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছি, কিন্তু কোনো দিন তাকে কিছু খাওয়া বা কেনার টাকা দিতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, গত ২২ বছর ধরে স্বামীর রেখে যাওয়া একমাত্র ঘরটিতেই থাকছি। যদি একটা থাকার মতো ঘর পেতাম, তাহলে শেষ বয়সে একটু শান্তিতে মরতে পারতাম। বৃষ্টি এলে ঘরের মধ্যে পানি পড়ে। কত কষ্ট করে আছি, যেন দেখার কেউ নেই।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এক দুঃখজনক ঘটনার কথা জানিয়ে ফজিলা বেগম বলেন, গত রোববার (৩১ আগস্ট) রাতে আমার ঘর থেকে মোবাইল আর চাল চুরি হয়ে গেছে। মানুষের কাছে চেয়ে কিছু টাকা জোগাড় করে চাল কিনেছিলাম, সেটাও গেল।
স্থানীয়রা জানান, ফজিলা বেগম প্রকৃত অর্থেই একজন গরিব ও অসহায় মানুষ। তার সংসারে উপার্জনক্ষম কেউ নেই। খেয়ে না খেয়ে তার জীবন চলছে। নতুন ঘর নির্মাণ করার মতো সামর্থ্য তার নেই। সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থা বা সহানুভূতিশীল ব্যক্তি যদি পাশে দাঁড়ান, তাহলে তিনি জীবনের শেষ সময়টা অন্তত শান্তিতে কাটাতে পারবেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুন সিকদার বলেন, ফজিলা বেগম খুবই অসহায় জীবনযাপন করছেন। তার তিন ছেলের মধ্যে দুজন মারা গেছে, একজন প্রতিবন্ধী। তিনি নাতনিকে নিয়েও কষ্টে আছেন। প্রতিবন্ধী ছেলেকে ইতোমধ্যে ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। ফজিলা বেগমের জন্য বিধবা ভাতার চেষ্টা চলছে। তার ঘর ভেঙে পড়েছে, বৃষ্টি-শীত কিছুই ঠেকানোর মতো অবস্থা নেই। ইউপি চেয়ারম্যান, সমাজসেবা অফিস ও ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলে যত দ্রুত সম্ভব তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করা হবে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ বলেন, ফজিলা বেগমের বিষয়ে আমি খোঁজখবর নিয়েছি। তার ছেলেকে ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই তার বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। ঘর নির্মাণের জন্য অর্থ সহায়তা প্রদানের বিষয়ে ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলবো।
আরিফুল ইসলাম/এআরবি