বিদ্যালয়ে পোকামাকড় ও সাপের আতঙ্কে ৬ শতাধিক শিক্ষার্থী

ঝালকাঠি শহরের সুগন্ধা পৌর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় এবং মিলন মন্দির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছয়শতাধিক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের মাঠ ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। মাঠজুড়ে জমে থাকা পানি, ভগ্ন টিনশেড ঘর, মশা-মাছি, পোকামাকড় ও সাপের আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া, দুর্গন্ধের কারণে শিক্ষার্থীরা বারান্দায় দাঁড়াতেও পারছে না। মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা এবং সাপের ভয় তাদের স্বাভাবিক পড়াশোনা ও শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় দুটি একই কমপ্লেক্সে অবস্থিত। এখানে প্রায় ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। শিক্ষার্থীদের একমাত্র খেলার জায়গা এই বিদ্যালয়ের মাঠ।
বিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাশে রয়েছে একটি পুরাতন টিনসেড ভবন, যার ভিতরে একটি ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। মাঠ ও ভবনের ভিতরে জমে থাকা পানিতে মশা-মাছি ও পোকামাকড়ের উপদ্রব তীব্র আকার ধারণ করেছে। টিনের চালের নিচে রয়েছে ভিমরুলের বাসা। মাঝে মধ্যে সাপও দেখা যায় বলে জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

মাঠে জমে থাকা পানির কারণে ডেঙ্গুর আতঙ্কে শিক্ষকরা কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত এই দূষিত পরিবেশ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ক্লাস বিরতিতে শিক্ষার্থীরা মাঠে হাঁটতে পারে না, ফলে তাদের ক্লাসরুমেই বন্দি থাকতে হচ্ছে। এতে তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে।
নবম শ্রেণির ছাত্রী নাবিলা আক্তার বলেন, আমরা মাঠে খেলতে পারি না। সবসময় পানি জমে থাকে, মশা-মাছি হয়, আর পুরাতন ঘরটিতে মাঝে মাঝে সাপ দেখা যায়। আমাদের মাঠে খেলাধুলা তো দূরের কথা, তাকানোও যায় না।
আরও পড়ুন
একই শ্রেণির পলি আক্তার বলেন, ক্লাস চলাকালীন সময়ে মাঠ ও পুরাতন ঘর থেকে প্রচুর দুর্গন্ধ আসে। ক্লাস করাও যায় না। সাপের ভয়ে আমরা নিচ তলার বারান্দাতেও দাঁড়াতে পারি না। স্কুলের মাঠ ঠিক করা আমাদের জন্য খুবই জরুরি।
বিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক মনির মাঝি বলেন, আমার মেয়ে ওই স্কুলে পড়ে। কিন্তু এখন স্কুলের পরিবেশ খুবই খারাপ। এখানে ডেঙ্গুর ঝুঁকি রয়েছে। কবে যে আমার মেয়ে আক্রান্ত হয়, বলা যায় না। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত।

শিক্ষকরা জানান, মাঠ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে খেলাধুলা করতে পারছে না, ফলে তাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে এবং মানসিক চাপ বেড়ে যাচ্ছে। যদিও নিয়মমতো বারান্দায় এসেম্বলি হচ্ছে, তবুও খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সুযোগ না থাকায় শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা, মনোযোগ এবং দলবদ্ধ কাজ করার দক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন জমাদ্দার বলেন, পুরাতন টিনসেড ঘরটি অপসারণ এবং মাঠ সংস্কারের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছি। ঘরটি সরানো হলে ও মাঠটি উঁচু করা গেলে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি নিরাপদ হবে। তখন এসেম্বলি, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম নির্বিঘ্নে করা যাবে।
এডহক কমিটির আহ্বায়ক এডভোকেট মাহবুব আলম কবির বলেন, শিক্ষার্থীরা মাঠ ব্যবহার করতে না পারায় শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত মাঠ সংস্কার করে ব্যবহারযোগ্য করতে হবে। আমরা আশা করি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
ঝালকাঠি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী খাইরুল ইসলাম বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ সম্পর্কে জানি এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেছি। মূল সমস্যা হলো ড্রেনেজ ব্যবস্থা। শহরের বাইরের ড্রেনগুলো কার্যকর না থাকায় বৃষ্টির পানি নেমে যাচ্ছে না। আমরা মাঠ উঁচু করার পরিকল্পনা করেছি এবং পুরাতন টিনসেড ঘরটি ভেঙে ফেলা হবে।
শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা সবাই দ্রুত মাঠ সংস্কার ও পুরনো টিনশেড ঘর সরানোর দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে শিক্ষার্থীরা গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে। শহরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এখানে শত শত শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। তাই তাদের জন্য একটি নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন ও ব্যবহারযোগ্য মাঠ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিলে শিক্ষার্থীরা আবারও মাঠে হাঁটা চলা, খেলাধুলা, এসেম্বলিতে অংশ নেওয়াসহ সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে নির্বিঘ্নে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
শাহীন আলম/এআরবি