চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন হুমকিতে টি-বাঁধ ও ডান তীর রক্ষা প্রকল্প

বন্যার শঙ্কা ও নদী ভাঙনের আতঙ্ক প্রতি বছর ফিরে আসে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে। হঠাৎ করে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধির কারণে এবারও ভাঙনের মুখে পড়েছে উপজেলার কালিরকুড়া টি-বাঁধ, ডান তীর রক্ষা প্রকল্প এবং কাঁচকোল এলাকার প্রায় দুই কিলোমিটার ওয়াবদা বাঁধ। টি-বাঁধের দুই ধারে রক্ষা প্রকল্পের পিচিং সংযুক্ত না থাকায় ভাঙন আতঙ্ক বেড়েছে দ্বিগুণ।
এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এখন সরাসরি নদী ভাঙনের কবলে। ফলে হুমকিতে রয়েছে এলাকার বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি।
গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়তে শুরু করে। এর ফলে উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের ফকিরেরহাট টি-বাঁধ, ডান তীর রক্ষা প্রকল্প, ও কাঁচকোল ওয়াবদা বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে রয়েছে কাঁচকোল বাজার, স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও আশপাশের কয়েকটি ঘনবসতিপূর্ণ গ্রাম।
রানীগঞ্জ ইউনিয়নের ফকিরের হাট এলাকার আলামিন ইসলাম (৫৬) বলেন, ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের পাড় সংযোগ (পিচিং) সঠিকভাবে টি-বাঁধের সঙ্গে যুক্ত না থাকায় নদীর প্রবাহ বাঁধের পাশ কেটে ভাঙন সৃষ্টি করছে।
গত বছরও ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের পিচিংসহ ওয়াবদা বাঁধে কয়েকবার ধস দেখা দেয়। সে সময় পুনরায় মেরামতের নামে মাত্র কিছু জিও ব্যাগ ফেলানো হয়। জিও ব্যাগ ফেলানোর সময় বরাদ্দের চেয়ে কৌশলগতভাবে কম ফেলানো হয় অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জলিল (৬০) ও আব্দুর রহিম (৫০) বলেন, প্রতিবারই কাগজে-কলমে কাজ হয়, বাস্তবে শুধু দায়সারা জিও ব্যাগ ফেলানো হয়। বরাদ্দের চেয়ে কম কাজ হয়, অথচ বিল নেওয়া হয় পুরোটা।
তারা আরও বলেন, মেরামতের স্থানে গভীর পানিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর নামে ‘দেখানো কাজ’ চালানো হয়, যা কার্যত কোনো ফল দেয় না।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল করিম বলেন, টি-বাঁধ বা ওয়াবদা বাঁধ যদি ভেঙে পড়ে, তাহলে পুরো চিলমারী উপজেলাই ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। বিলীন হয়ে যাবে ডান তীর রক্ষা প্রকল্পও। একটি সমন্বিত পরিকল্পনা ও জরুরি মেরামত কার্যক্রম ছাড়া এ বিপর্যয় রোধ সম্ভব নয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন, আমি সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন পাঠানো হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, পরিস্থিতি আমাদের নজরে রয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, আমরা প্রস্তুত রয়েছি। প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মমিনুল ইসলাম বাবু/আরএআর