নিক্সন চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে উপজেলা প্রশাসনের মামলা

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার দুটি ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে বাদ দিয়ে ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছিল। এই ঘটনায় ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ, থানা এবং বিভিন্ন সরকারি ভবনে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। অবশেষে, এই হামলার ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে।
এ মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীকে, দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে হামিরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খোকন মিয়া এবং ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে নিক্সনের চাচাতো ভাই মাদারীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার চর দত্তপাড়া মহল্লার মনির চৌধুরীকে।
ভাঙ্গা উপজেলার সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর সৌমেন্দ্র নাথ সরকার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। ভাঙ্গা থানায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর এটি নথিভুক্ত হয়।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) পুলিশের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নিক্সন চৌধুরী ও তার চাচাতো ভাই মনির চৌধুরীর নির্দেশে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নের বিভিন্ন মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দিয়ে প্রায় ৮ থেকে ৯ হাজার মানুষকে জড়ো করা হয়। এরপর তারা সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ভাঙ্গা গোলচত্বরের বরিশাল স্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং হঠাৎ করেই ডিউটিরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায়।
গত সোমবারের সহিংস ঘটনায় ভাঙ্গা থানায় এ নিয়ে মোট তিনটি মামলা হলো। এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর ভাঙ্গা থানা এবং ১৮ সেপ্টেম্বর ভাঙ্গার হাইওয়ে থানা মামলা করে।
এছাড়া ওই সহিংস ঘটনার আগে গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা উল্লেখ করে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নের দুই চেয়ারম্যানসহ মোট ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করে ভাঙ্গা থানার পুলিশ। ওই মামলার আগের দিন আলগী ইউপি চেয়ারম্যান ম. ম. সিদ্দিককে আটক করে পরের দিন দ্রুত বিচার আইনে মামলা করে। এ মামলায় তাকে এক নম্বর আসামি উল্লেখ করে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয় ভাঙ্গা থানার পুলিশ।
উপজেলা প্রশাসনের দায়ের করা মামলায় বলা হয়, ১৫ সেপ্টেম্বর ভাঙচুরের পাশাপাশি সম্পদ লুটপাট করা হয়েছে। এ ঘটনায় মোট ক্ষতি পরিমাণ দেখানো হয়েছে অন্তত এক কোটি টাকা। এছাড়া হামলাকারীরা বিভিন্ন রেজিস্টার ও নথিপত্র, কম্পিউটার সামগ্রীসহ মোটরসাইকেল উপজেলা নির্বাচন অফিসের সামনে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
এজাহারে বলা হয়, গত ৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সংসদীয় ক্ষমতা আইন নির্বাচনের পুনঃনির্ধারিত সীমানা চূড়ান্ত করা হয় যেখানে ফরিদপুর-৪ আসনের অন্তর্ভুক্ত ভাঙ্গা উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা থেকে ২টি ইউনিয়ন (আলগী ও হামিরদী) বিযুক্ত হয়ে ফরিদপুর-২ (সালথা ও নগরকান্দা)-তে যুক্ত হয়। যার ফলশ্রুতিতে গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ভাঙ্গা উপজেলার জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে ভাঙ্গা গোলচত্বরের সঙ্গে সংযুক্ত জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ৪টি মহাসড়ক বন্ধ করে। এরই ধারাবাহিকতায় বিক্ষুব্ধ জনতা গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলার ৪টি মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে লাঠি-সোঠা ও দেশীয় অস্ত্রসহ ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ কমপাউন্ডে এসে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে মারাত্মক ত্রাসের সৃষ্টি করে। ইউএনওসহ আমরা তাদের অপরাধমূলক কাজ করতে বারবার নিষেধ করায় আসামিরা আমাদের ধাওয়া দিলে আমরা প্রাণভয়ে উপজেলা চত্বর ত্যাগ করি।
মামলার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, এ মামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান শুরু হয়েছে।
জহির হোসেন/এমএন