মানিকগঞ্জে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা

মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার এক পুলিশ সদস্যকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও মানিকগঞ্জ-১ আসনের এমপি প্রার্থী খন্দকার আকবর হোসেন বাবলুর অনুসারি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কহিনুর ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঘটনার পর ঘিওর থানা-পুলিশের সদস্য এ এস আই রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২৫ থেকে ৩০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, খন্দকার বিল্টু (৪৬), জিএস সেলিম (৪৫), উজ্জল (৪০), মীর কাওসার (৫২), হারেজ (৫৮), রফিকুল ইসলাম পিন্টু (৫০), রাজু (৪৮), শফিউল আলম বিল্টু (৫৫) ও শহিদুল ইসলাম চান্দু (৫৫)। তারা সবাই বিএনপির নেতা-কর্মী ও এমপি প্রার্থী খন্দকার আকবর হোসেন বাবলুর অনুসারি।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বেলা সোয়া ৫টার দিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও মানিকগঞ্জ-১ আসনের বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের এমপি প্রার্থী খন্দকার আকবর হোসেন বাবুল ও ঘিওর সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মীর কাউসারের নেতৃত্বে একটি মোটরসাইকেলের বহর থানার ভেতরে প্রবেশ করে মোটরসাইকেল রাখতে চান। পরে থানা-পুলিশের নারী কনস্টেবল আন্না আক্তার বিষয়টি ডিউটি অফিসার এএসআই রফিকুল ইসলামকে অবগত করেন। পরে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে বাবলুর নেতা-কর্মীর মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয় এবং পুলিশ সদস্যকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। এর পর জেলা বিএনপির নেতা খন্দকার আকবর হোসেন বাবুল তার অনুসারীদের নিয়ে থানার ভেতর থেকে চলে যান।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে মামলার অভিযুক্তরাসহ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খন্দকার আকবর হোসেন বাবলুর একটি মোটরসাইকেল বহর নিয়ে থানা কম্পাউন্ডের প্রবেশ গেটের সামনে ১০ থেকে ১২টি মোটরসাইকেল থানার ভেতরে প্রবেশ করে। বেআইনি জনতাবদ্ধে থানার প্রবেশ গেটের ভেতরে অনিধিকার প্রবেশ করে মামলার বাদীসহ পুলিশকে উদ্দেশ করে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন তারা। পুলিশের পক্ষ থেকে গালিগালাজ না করতে অনুরোধ করা হলেও মামলার অভিযুক্তরা তা মানেন না। বরং পুলিশ সদস্য ও মামলার বাদী এএসআই রফিকুল ইসলামকে বুকে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধাক্কা দিয়ে আঘাত করেন এবং ভয়ভীতি হুমকি প্রদান করেন। খরব পেয়ে ঘিওর থানার হলমোড় এলাকায় ডিউটিতে থাকা উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ মাসুদ রানাসহ একটি ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় অভিযুক্তরা পুলিশকে উদ্দেশ করে বিভিন্ন গালিগালাজ করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।
এ ঘটনার পরে মামলার বাদী ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেন। পরে তিনি বাদী হয়ে অভিযুক্ত ৯ জনসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে থানা কম্পাউন্ডে অনধিকার প্রবেশ করে সরকারি কাজে বাধা দানের জন্য আক্রমণ, বলপ্রয়োগ ও আঘাত প্রদানের অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে মামলার বাদী ঘিওর থানা-পুলিশের এ এসআই রফিকুল ইসলাম বলেন, তারা (অভিযুক্তরা) হুট করেই থানার ভেতরে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশ করে বলেন, পেছনে নেতার (এমপি প্রার্থী খন্দকার আকবর হোসেন বাবলু) গাড়ি আছে। এ সময় তাদের মোটরসাইকেলগুলো থানার ভেতরে না রাখতে অনুরোধ করি। কিন্তু অভিযুক্তরা আমাকে কথাই বলতে দেননি এবং আমাকে ঠেলে নিয়ে যান। থানার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় আমি এবং একজন নারী পুলিশ সদস্য ছিলাম। আমাদেরকে তারা অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করেছেন। একটি রাজনৈতিক দলের (বিএনপি) নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে এমন আচরণ আমি কেন, দেশের কোনো সাধারণ মানুষও প্রত্যাশা করে না। পরে বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন স্যারদের জানাই এবং তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছি।
এ বিষয়ে ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কহিনুর ইসলাম বলেন, গতকালের ঘটনায় থানা-পুলিশের এএসআই রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে বলে তিনি জানান।
সোহেল হোসেন/এএমকে