কুড়িগ্রামে তলিয়ে গেছে ফসল, নদীভাঙনে ঘরছাড়া শতাধিক পরিবার

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুর্ভোগ কমেনি নদী তীরবর্তী মানুষের। এখনও নিম্নাঞ্চলগুলোতে রোপা আমন, শাকসবজি ও মাসকলাই ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
অপরদিকে জেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদীর অন্তত ১৫টি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ নদীভাঙন। গত দুই দিনে এসব এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবার ঘরছাড়া হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা য়ায়, সাম্প্রতিক বন্যায় জেলায় প্রায় ১ হাজার ৭৮৭ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, রাজারহাট, চিলমারী ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উলিপুরের তিস্তা বেষ্টিত থেতরাই, গুনাইগাছ, দলদলিয়া ও বজরা ইউনিয়নের গোড়াই পিয়ারের চর, জুয়ান সতরার চর, হোকডাঙ্গার চর, আমনিয়াসার চর, কর্পূরের চর, গাবরের চর, অর্জুন চর, চাপরার চর, দামার হাট, টিপমার চর, বজরার চর ও সাতালস্কারসহ জেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, জমি থেকে পানি নেমে গেলেও ক্ষেতের ফসল পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
উলিপুরের বজরা ইউনিয়নের চর গোড়াইপিয়ার এলাকার নুর ইসলাম বলেন, এবারে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় দেড় একর জমিতে পেঁয়াজ, আলু, মুলা ও লালশাক চাষাবাদ করেছি । দু’দিনের বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে এসব ফসল। ধার দেনা করে এ চাষাবাদ করেছি। কিভাবে ধার দেনার টাকা পরিশোধ করব? খুব চিন্তায় আছি। তিস্তার নদীর ভাঙনে এক একর ত্রিশ শতক আমন ধানের ক্ষেতসহ জমি নদীতে চলে গেছে।
দলদলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ দলদলিয়া লাল মসজিদ এলাকার আব্দুল করিম বলেন, অর্জুনের চরে ৭০ হাজার টাকা খরচ করে ১ একর জমিতে বীজ বাদাম এবং ৪০ শতক জমিতে আমন চাষ করেছি। সোমবার সকালে এসে দেখি সব তালিয়ে গেছে। আমার স্বপ্ন বন্যার পানি খেয়ে নিল। আমি কিভাবে সংসার চালাব, চিন্তা করে পাচ্ছি না।
নাগেশ্বরীর উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের দামালগ্রামের নুর ইসলাম বলেন, দুধকুমার নদীর ভাঙনে আমার বসতভিটা নদীতে চলে গেছে। কোনোমতে ঘরের জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে পেরেছি। এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই।
একই এলাকার এরশাদুল হক বলেন, চোখের সামনে বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেল। কিছুই করতে পারলাম না। এখন কোথায় যাব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, বর্তমানে নদ-নদীর চারটি পয়েন্টে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চলছে। অতিরিক্ত পয়েন্টে কাজের অনুমোদন পেলে দ্রুত তা শুরু করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবে প্রণোদনার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
মমিনুল ইসলাম/আরকে