ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের খাত থেকে লোপাট ১২-১৫ লাখ টাকা

ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় ভুয়া বিল দিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বেতনের টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। ময়লা ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি আর অনিয়ম যেন চেনা চিত্র হয়ে উঠেছে এ পৌরসভায়। অভিযোগ রয়েছে, শুধু পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বেতন খাত থেকেই প্রতিবছর লোপাট হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এই টাকা যাচ্ছে সরাসরি কিছু কর্মকর্তার পকেটে।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে ৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয়। শুরু থেকেই নানা সমস্যায় জর্জরিত এ পৌরসভায় বর্তমানে ১৩৮ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর বিপরীতে মাসিক বেতন খরচ দেখানো হয়েছে ৯ লাখ ৪১ হাজার ১০০ টাকা। তবে এই হিসাব বাস্তব অবস্থার সঙ্গে মেলে না।
বেতন তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, পৌরসভার তালিকায় ঝাড়ুদার দেখানো হয়েছে ৩৬ জন, অথচ বাস্তবে কাজ করছেন মাত্র ২২ জন। একই ব্যক্তির নামে একাধিক খাত থেকে বেতন উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে। কেউ কেউ বেতন নিলেও মাঠে কাজ করছেন না। এমনকি কিছু ভুয়া নাম দেখিয়ে টাকা তোলা হচ্ছে। এছাড়াও, কিছু কর্মচারীকে অতিরিক্ত বেতন ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে ঘুষের বিনিময়ে, কেউ কেউ স্ত্রীর নাম তালিকাভুক্ত করে অর্থ আত্মসাৎ করছেন।
এই অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের প্রধান সুপারভাইজার ও হিসাবরক্ষক দোষ চাপান পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ওপর।
হিসাবরক্ষক লিটন ইসলাম বলেন, আমি শুধু একজন অ্যাকাউন্টেন্ট। যা করি, নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশেই করি। তিনি আদেশ দিয়েছেন, আমি টাকা দিয়েছি।
পরিচ্ছন্নতা সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম বলেন, আমি নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শে কাজ করেছি। আমি একটু বেশি কাজ করি, তাই স্ত্রীর নামে বাড়তি টাকা নিয়েছি। তবে বাইরের কারও নাম দিইনি।
অভিযোগের সত্যতা আংশিক স্বীকার করে পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাকিব উজ জামান বলেন, কিছু কিছু বিষয় জানতাম, তবে এগুলো আগে থেকেই চলে আসছিল। আমি বাধা দিয়ে স্বাভাবিক কাজের বিঘ্ন ঘটাতে চাইনি।
এই দুর্নীতির প্রভাব পড়েছে শহরের পরিচ্ছন্নতায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, অধিকাংশ রাস্তাঘাট ও বাজার এলাকায় নিয়মিত ঝাড়ু দেওয়া হয় না।
পৌর শহরের ব্যবসায়ী মুকুল বলেন, আমার দোকানের সামনে প্রতিদিন ময়লা জমে থাকে। কেউ এসে পরিষ্কার করে না, নিজেই করতে হয়। না পারলে দোকানে বসা যায় না দুর্গন্ধে।
অন্য ব্যবসায়ী কামাল বলেন, আমি কখনও দেখিনি আমার দোকানের সামনে কেউ ঝাড়ু দিয়েছে। বছরে একবারও ড্রেন পরিষ্কার হয় না। অথচ আমরা নিয়মিত পৌর কর পরিশোধ করি। তাহলে আমাদের এই অবস্থা কেন?
পরিচ্ছন্নতা কর্মীরাও তাদের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন। ঝাড়ুদার বিজয় বলেন, আমি একা তিন-চারজনের জায়গা ঝাড়ু দিচ্ছি। অথচ বেতন মাত্র ৩ হাজার টাকা। এতে কাজের প্রতি মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন।
ড্রেন পরিচ্ছন্নকর্মী গোবিন্দ বলেন, আমার বেতন ৯ হাজার টাকা, কাজ করি আধাবেলা। যদি বেতন বাড়ানো হয়, তাহলে সারাদিন কাজ করতে পারি। এতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় উন্নতি হবে। পাশাপাশি জনবলও বাড়ানো দরকার।
পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন তালিকায় অসঙ্গতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন পৌরসভার প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সরদার মোস্তফা শাহিন।
তিনি বলেন, যাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে তারা সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, তা যাচাই করতে আমরা ভোরে মাঠে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। ইতোমধ্যে কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। অনিয়ম স্বীকার করছি এবং এই বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ভোরবেলার পরিবর্তে রাত ১১-১২টার দিকে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করব, যাতে তদারকি সহজ হয় এবং কার্যকারিতা বাড়ে।
রেদওয়ান মিলন/এআরবি