সাপাহারে শিক্ষা বিপ্লবের অগ্রনায়ক মোজাহারুল মাস্টার

একটি শহরের পরিবর্তনের পেছনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অবদান থাকলেও এই ছোট্ট শহরটির পরিবর্তনের সিংহভাগ অবদান একজন শিক্ষকের। নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহার। একজন শিক্ষক শিক্ষার বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়ে পাল্টে দিয়েছেন এ উপজেলার দৃশ্যপট।
জেলা শহর থেকে দূরবর্তী উপজেলাটি জেলার মানুষের কাছে পরিচয় পেয়েছে নতুন শিক্ষা নগরী হিসেবে। এ উপজেলায় গড়ে উঠেছে কয়েকটি সুনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে আশপাশের ৬-৭টি উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছেন৷ সাপাহার উপজেলাকে শিক্ষা নগরী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া সেই শিক্ষকের নাম প্রায়ত মোজাহারুল হক। যিনি সবার কাছে এক নামে মোজাহারুল মাস্টার নামেই পরিচিত ছিলেন।
মোজাহারুল হক মাস্টার ছিলেন একজন সরকারি প্রথামিক বিদ্যালায়ের শিক্ষক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা। প্রথমে সহকারী শিক্ষক এবং পরে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে কিশোর যোদ্ধা হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
মোজাহারুল মাস্টারের শিক্ষা ও পেশাগত জীবন
পরিবার সূত্রে জানা যায়, মোজাহারুল হক মাস্টার ১৯৫৭ সালে নওগাঁর সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহারের তেঁতুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সাত ভাই এবং তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তিনি মাধ্যমিক সাপাহার তিলনা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে এবং উচ্চ মাধ্যমিক নওগাঁ বশির উদ্দিন কো-অপারেটিভ (বিএমসি) সরকারি কলেজ থেকে ১৯৭৭ সালে সম্পন্ন করেন। ১৯৭৭ সালের পর তিনি পড়ালেখা বাদ দিয়ে মুদি ব্যবসায়ী হিসেবে ব্যবসা শুরু করেন এবং একই বছরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত মুদি ব্যবসায় নিয়জিত ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে নওগাঁর পোরশা উপজেলার বালিয়াচান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে তিনি শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশ করেন।

১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সাপাহার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালায়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সাপাহার উপজেলার দেওপাড়া সরকারি প্রথমিক বিদ্যালায়ে সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন। ২০০২ সালে সাপাহার মডেল সরকারি প্রথামিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০০৯ সাল পর্যন্ত সেখানেই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০০৯ বদলিজনিত কারণে তিনি সাপাহার বাদ দমদমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালায়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং সেখান থেকেই ২০১৬ সালে শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসরে যান। দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তিনি ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
সাপাহার যেভাবে শিক্ষা নগরীতে রূপান্তরিত
মোজাহারুল মাস্টার ২০০২ সালে সাপাহার মডেল প্রথামিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর গণশিক্ষা কার্যক্রম কীভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায় সে বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করেন। ২০০৩ সালে তিনি প্রথম শ্রেণি কার্যক্রমের পাশাপাশি অতিরিক্ত সময়ে বিশেষ ক্লাস চালু করেন। প্রথম অবস্থায় বাছাইকৃত কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে শুরু করলেও কিছুদিন পরে তার এই কার্যক্রমের সাফল্য আসতে শুরু করায় অভিভাবকদের অনুরোধে সব শিক্ষার্থীকে নিয়ে বিশেষ এই শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করেন। যার সাফল্য হিসেবে ২০০৫ সালের প্রথামিক সমাপনী বৃত্তি পরীক্ষায় সাপাহার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালায় ফলাফলের দিক থেকে নওগাঁ জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করে। একইসঙ্গে পরপর টানা ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রথম স্থানের সাফল্য ধরে রাখে প্রতিষ্ঠানটি।
ক্লাস শেষে অতিরিক্ত সময়ে বিশেষ এই শ্রেণি কার্যক্রমের খবর ছড়িয়ে পড়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সাপাহারের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মোজাহারুল মাস্টারের দ্বারা অনুপ্রণিত হয়ে তারও তাদের প্রতিষ্ঠানে এই কার্যক্রম শুরু করে। এই কার্যক্রমে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই তখন সফলতা পেতে শুরু করে।

এর মাঝে ১৯৯৫ সালে মোজাহারুল মাস্টার সাপাহার উপজেলা পরিষদ-সংলগ্ন এক স্থানে আধুনিক এবং ধর্মীয় শিক্ষার আদলে আল হেলাল ইসলামী অ্যাকাডেমি নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে প্রাথমিক পর্যায়ের থাকলেও পরবর্তীতে এটি মাধ্যমিক এবং ২০১৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নতি হয়। তার গড়া প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তামানে প্রায় আড়াইহাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। তার গড়া প্রতিষ্ঠানটিতেও তিনি একই পদক্ষেপ অনুসরণ করেন। যার সফলতা স্বরূপ আল হেলাল ইসলামী অ্যাকাডেমি এন্ড কলেজ বর্তামনে জেলা পর্যায়ের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর হয়েছে। ২০১৪ সালের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি সবসময় মাধ্যমিকের ফলাফলে জেলা পর্যায়ে প্রথম থেকে তৃতীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া, উপজেলার আরেকটি প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাপাহার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। এ প্রতিষ্ঠানটিও শুরুর দিকে তেমন সাফল্য না পেলেও সাপাহারে শিক্ষার বৈপ্লবিক পরিবর্তনে সে প্রতিষ্ঠানটিও এখন নওগাঁ জেলা পর্যায়ে প্রথম সারিতে রয়েছে।
খুব দ্রুতই শিক্ষা ক্ষেত্রে সাপাহারের নাম ছড়িয়ে পড়ে জেলা শহরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলায়। তাই তো অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য হয়ে উঠেন সাপাহারমুখী।
তাদেরই একজন পোরশা উপজেলার আমইড় গ্রামের বাসিন্দা মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ২০১০ সালের পর থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে সাপাহারের বিশেষ সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৪ সালে সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাকে পড়াশোনা করানোর জন্য পরিবারসহ সাপাহারে আসি। উপজেলা শহর হলেও জেলা কিংবা বিভাগীয় শহরের থেকে সাপাহারের শিক্ষার মান কোনো অংশেই কম না। আমি নিজেও একজন শিক্ষক, আমার গ্রামের পাশেই একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছি। কিন্তু শিক্ষার গুনগত পরিবেশ না থাকায় বাধ্য হয়ে সাপাহার মুখি হতে হয়েছে। আমার মত আশেপাশের কয়েকটি উপজেলার অভিভাবকরা তাদের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সাপাহারমুখী হয়েছেন। বর্তমানে সাপাহার শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে।
মোজাহারুল মাস্টারের শুধু একজন আদর্শ শিক্ষক ছিলেন না, তিনি একধারে ছিলেন একজন ভালো সংগঠক এবং দায়িত্বশীল একজন নেতা। সাপাহার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির শুরুতে তিনি অর্থ সম্পাদক পরে সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৫ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাপাহার আল হেলাল ইসলামি অ্যাকাডেমি এন্ড কলেজের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া, তার নিজ গ্রাম তেতুলিয়ায় একটি হাফেজিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মোজাহারুল হক সাপাহার উপজেলার কৃষকদের সংগঠন চাষি সমিতির সভাপতির দায়িত্ব দীর্ঘদিন পালন করেছেন।
মোজাহারুল মাস্টারের পরিবার
মোজাহারুল মাস্টারের পরিবারের অধিকাংশ সদস্য শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত। তার স্ত্রী আমিনা হক তিনিও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন এবং স্বামী-স্ত্রী দুজনে একসঙ্গে দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন। তার বড় ছেলে আমিনুল ইসলাম লুলু সাপাহার গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। মেয়েও রাজশাহী শিরোইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। এ ছাড়া, ছোট ছেলে মুহাম্মদ মুমিনুল হক চট্রগ্রামে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে বস্ত্র প্রোকৌশলী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
পরিবার, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সহকর্মী ও সমাজের বিশিষ্টজনরা যা বলছেন
মোজাহারুল মাস্টারের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং পরবর্তীতে তার সহকর্মী সাপাহার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ মুত্তাকিন বলেন, আমি যে সময় পড়াশোনা করি সে সময় স্যার আমাদের গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ক্লাস নিতেন। স্যার যেমন শিক্ষক, তেমন অভিভাবক এবং তেমন বন্ধু ছিলেন আমাদের। স্যারের বাইরের রূপ দেখে আমরা সবাই ভয় পেতাম। আর অন্য কোনো বিষয়ের পড়া ক্লাসে না করেও গেলো গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় করে যাওয়া লাগতোই। স্যারকে দেখে কমবেশি সবাই ভয় পেতো। তবে স্যার অনেক আন্তরিক ছিলেন তার ভালোবাসা দিয়ে আমাদের সবাইকে অনেক আপন করে নিতেন।
তিনি আরও বলেন, স্যারের সহকর্মী হিসেবে আমি যখন মডেল স্কুলে যোগদান করি তখন তিনি প্রধান শিক্ষক ছিলেন। অনেকেই আছে ছাত্র তার সহকর্মী হলে তাকে হেউ প্রতিপন্ন করেন৷ কিন্তু মোজাহারুল স্যার সবসময় আমাকে বন্ধুর মতো আপন করে রেখেছিলেন। স্যার অনেক দূরদর্শী মানুষ ছিলেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেড়ে যাওয়ায় আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থী সংখ্যা কিছু কমে যাচ্ছিল। তখন আমরা অনেক চিন্তিত ছিলাম। ওই সময় স্কুলের অফিসে বিরতির সময়ে আমরা সব শিক্ষক মিলে কাঁঠাল খাচ্ছিলাম। স্যার অনেক কাঁঠাল খেতে পছন্দ করতেন। হঠাৎ করেই দেখলাম স্যার কাঁঠালের বিচিও খেয়ে ফেলছেন। তখন স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম স্যার আপনি তো কাঁঠালের বিচি খেয়ে ফেলছেন। তখন স্যার আমাকে বললেন মুত্তাকিন চিন্তার কোনো কারণ নেই, বিচি খেলে কাঁঠাল তাড়াতাড়ি পেট থেকে হজম হয়ে যাবে। তুমি শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার যে বিষয় নিয়ে চিন্তা করছো এটি নিয়ে চিন্তার কোনো প্রয়োজন নেই। চিন্তা হজম করতে শেখো সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ঠিক কিছুদিন পরেই স্যারের দূরদর্শী নেতৃত্বে আমাদের প্রতিষ্ঠান আবারও এগিয়ে যায়। স্যারের সঙ্গে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত অনেক স্মৃতিময়, স্যারের সঙ্গের স্মৃতি বলতে শুরু করলে বলা শেষ হবে না।আমার শিক্ষকতা জীবনে স্যারকে সবসময় অনুপ্রেরণা মনে করি।

মোজাহারুল মাস্টারের ছোট ছেলে বস্ত্র প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুমিনুল হক বলেন, বাবা সবসময় কীভাবে সবার মাঝে শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া যায় সে বিষয় নিয়ে চিন্তা করতেন। অনেক নিম্ন মধ্যবৃত্ত পরিবারের সন্তান অনেক মেধাবী হয় কিন্তু শিক্ষার অভাবে সে মেধাগুলো বিকশিত হয় না। বাবা সবসময় কীভাবে তাদের মেধগুলোকে কাজে লাগানো যায় সে বিষয় নিয়ে চিন্তা করতেন। এ কারণে উনি যখন মডেল স্কুলে প্রধান শিক্ষক হন তখন শ্রেণি কার্যক্রমের পরে অতিরিক্ত সময়ে বিনামূল্যে বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করেন এবং উনি নিজে একাই সেই ক্লাস পরিচালনা করতেন। ওই সময়টাতে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছিল যেগুলোতে সবার ছেলে-মেয়ে পড়তে পারতো না, যার কারণে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা যেন ভালো করতে পারে সে কারণেই উনি এই ক্লাসের ব্যবস্থা করেছিলেন। বাবার নেওয়া সেই উদ্যোগ পরে সবার কাছেই মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে। সবাই তাদের প্রতিষ্ঠানে একই কাজ শুরু করেছে ও ভালো সাফল্য পেয়েছে এবং এখনো পাচ্ছে। বাবা খুব কম সময়ই বসে থাকতেন। সবসময় কীভাবে নতুন কিছু করা যায় সেই চিন্তায় করতেন। বাবা শুধু আমাদের বটবৃক্ষের মতো ছাঁয়া দেননি, তিনি সমাজকে ছাঁয়া দিয়ে গেছেন।
আরও পড়ুন
সাপাহার উপজেলা বিএনপি এবং বণিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম শাহ চৌধুরী বেনু ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাপাহারের শিক্ষার পরিবর্তনের শুরু মোজাহারুল মাস্টারের হাত ধরেই। উনি মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন সাপাহারে বিশেষ চমক সৃষ্টি করেছিলেন। তাকে অনুকরণ বা অনুসরণ করেই সাপাহারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১০ সালের পর থেকে সাপাহারে শিক্ষার বিপ্লব ঘটেছে। দূরদূরান্তের অনেক লোক তাদের ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার জন্য সাপাহারকে বেছে নিয়েছে। বাইরের লোকজনের সমাগম ঘটায় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে। সাপাহারের পরিবর্তনের পেছনে শিক্ষার অবদান সবচেয়ে বড়।
মোজাহারুল হকের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান আল হেলাল ইসলামী অ্যাকাডেমি এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মোজাহারুল মাস্টার দূরদর্শী একজন শিক্ষক ও চিন্তক ছিলেন। জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জ নিতে পারতেন। উনার সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৯৫ সালে আমি তখন একটি মাদরাসা প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। আমার নিয়োগ-সংক্রান্ত একটি জটিলতার কারণে আমি ইউএনও অফিসে এসেছিলাম, কাজ শেষে সিড়ি থেকে নামার সময় উনি আমার পরিচয় জানতে চাইলেন। আমি তখন ওনাকে চিনতাম না। আমার কথাগুলো শুনলেন এরপর উনি আমাকে বললেন চলেন আমরাই একটা স্কুল তৈরি করবো। আমি বললাম কোথায়? তখন উনি আমাকে উপজেলার পাশে দুইটি বাঁশের বেড়ার রুম দেখিয়ে বললেন এখানে। তখন উনি আমাকে তার নিজের পকেট থেকে ১৩শ টাকা বেতন দিতেন। সে বেতনেই আমি তখন চাকরি শুরু করি। উনি প্রতিষ্ঠানের প্রথম বিল্ডিংয়ের ভিত্তি প্রস্থর ধার করা টাকা দিয়েই করেছিলেন। সেই বাঁশের দুটি বেড়ার রুম থেকে প্রতিষ্ঠানে এখন চারতলা অ্যাকাডেমিক ভবন তৈরি হয়েছে, ছয় তলা হোস্টেল নির্মিত হয়েছে। উনি সভাপতি থাকা অব্দি আমি অনেক টেনশনমুক্ত ছিলাম। যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে কোনো সমস্যায় পড়তে হতো না। উনি সহজেই সমাধান দিয়ে দিতেন। উনি মারা যাওয়ার পরে প্রতিষ্ঠানের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে আমাকে কয়েকবার ভাবতে হয়। আল হেলাল এবং সাপাহারের শিক্ষা বিপ্লবের অগ্রনায়ক মোজাহারুল মাস্টার।
মনিরুল ইসলাম শামীম/এএমকে