এনসিপি আগামীর সংসদে নির্ণয়কের ভূমিকা পালন করবে : সারজিস

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, এনসিপি আগামীর সংসদে নির্ণয়কের ভূমিকা পালন করবে। আমরা চাই স্থিতিশীল এবং ভারসাম্যপূর্ণ একটি সংসদ। সংস্কার এবং বিচার- এই কার্যক্রমের যে ধারাবাহিকতা, নির্বাচনের পরেও বরাবরের মত সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজ করে যাবে এনসিপি।
তিনি বলেন, তরুণদের ক্ষমতায়ন আগামীর বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা একটি গণআন্দোলন গড়ে তুলতে চাই। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এবং দৃশ্যমান বিচারের পরবর্তীতে যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে এনসিপি বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দল হিসাবে আবির্ভূত হবে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ময়মনসিংহ নগরীর তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে দলটির জেলা শাখার সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সারজিস আলম এসব কথা বলেন।
এনসিপির এই নেতা বলেন, আমরা মনে করি আমাদের সাংগঠনিক শক্তিমত্তা আগামীর বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি এবং জামায়াত আলাদা জায়গা থেকে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যতটুকু লড়াই করার দরকার, সেটুকু তাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সেখানে এনসিপি ভারতসহ পৃথিবীর যেকোনো দেশের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আপসহীন রাজনৈতিক দল। তাছাড়া বিগত সময়ে আপনারা দেখেছেন- বিএনপি কখনো এককভাবে সরকার গঠন করেনি, জামায়াত কখনো বড় পরিসরে সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেনি। সেই জায়গায় অভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতায় এনসিপি তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
তিনি বলেন, আমরা তরুণদেরকে নিয়ে সকল প্রকার দুর্নীতি ও অপকর্মের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে চাই। তরুণরা সংসদে না গেলে বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব হবে না। কারণ আওয়ামী লীগ প্রশ্নে বিএনপি এবং জামায়াত তাদের জায়গা থেকে এককভাবে দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারবে না, বরং এনসিপি এখানে অপরিহার্য একটি দল। সেখানে এনসিপি থাকলে আওয়ামী লীগ উৎখাতের যে লড়াই, সেটার নেতৃত্ব সঠিকভাবে চালিয়ে নিয়ে যাবে।
সভায় শাপলা প্রতীক প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, নির্বাচন কমিশনের সচিবের কথা শুনে মনে হচ্ছে- শাপলা প্রতীক দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত কোনো সমস্যা থাকা না থাকা এটা তাদের কাছে কোনো বিষয় না। শাপলা দেবে কি দেবে না- এটা তাদের মনমর্জির ওপর নির্ভর করে। অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান থেকে মনমর্জি মতো চলা, স্বেচ্ছাচারিতা করার ক্ষেত্রে তাদের যে আচরণ এটা আমরা প্রত্যাশা করি না, এটা আমরা মেনেও নেব না। আইনগত বাধা যেহেতু নেই এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দিতে হবে। মন চাইলো দেব না, এই আচরণ এনসিপির পক্ষ থেকে মেনে নেব না। এনসিপি শাপলা প্রতীক নিয়েই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
জোট গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ২০২৪ সাল। চব্বিশের অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের নেতৃত্বেই এনসিপি গঠিত হয়েছে। কয়েকটা সিটের জন্য এনসিপি কারো সঙ্গে নেগোসিয়েশন করবে, এটা এনসিপি বিশ্বাস করে না। যে কোনো রাজনৈতিক দল এক বা একাধিক, তাদের জায়গা থেকে জনগণ এবং দেশের আকাঙ্খা থেকে পরিবর্তনের জন্য যদি কমিটমেন্ট দেয়, সেই অনুযায়ী কথা এবং কাজ করে, সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে যদি আমাদের চিন্তাভাবনাগুলোর মধ্যে ঐক্য দেখা যায়, তখন আমরা নির্বচনী জোটের চিন্তা করতে পারি। তবে এনসিপি শাপলা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, এনসিপি সংসদের উচ্চ কক্ষে পিআর পদ্ধতির পক্ষে, তবে নিম্ন কক্ষে পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে। আমরা মনে করি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ যদি হয়, সেখানে উচ্চ কক্ষে পিআর পদ্ধতি শুরু করে সেটা বাংলাদেশের সাথে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ তা নিয়ে একটি বিশ্লেষণ হতে পারে। তখন সময় ও যৌক্তিক বিবেচনায় আলোচনা হতে পারে। এটা নিয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট।
সভায় নিজ দলের সাংগঠনিক অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে হোক, রাজনৈতিক দল হিসেবে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়ানোর জন্য হোক কিংবা আগামী নির্বাচনের জন্য হোক, এনসিপির সাংগঠনিক কাঠামো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেই লক্ষ্যে আমরা উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি জেলার সাংগঠনিক সমন্বয় সভা করছি। আমরা আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে এনসিপির জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সারা দেশের প্রতির্টি ওয়ার্ডে কমিটি চাই। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।
সভায় এনসিপির জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট জাবেদ রাসিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকিন আলম, উত্তরাঞ্চলের নেতা আবুল বাশার, জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার সমন্বয়ক আবু রায়হান প্রমুখ।
আমান উল্লাহ আকন্দ/আরএআর