চিকিৎসা বন্ধ থাকায় কোমরের নিচে পচন ধরেছে ফরহাদের

একটি সড়ক দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ফরহাদের (২২)। ৭ মাস আগেও দাপিয়ে বেড়াতেন ফরহাদ। অথচ এখন তিনি শয্যাশায়ী। তার শরীরে কোমর থেকে দু’পা সম্পন্ন অবশ। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে অবস্থা দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে পরিবার।
দুর্ঘটনার শিকার ফরহাদ ভোলা সদর উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তিনি দিনমজুর নিরব ও মমতাজ দম্পতির একমাত্র ছেলে।
ফরহাদ ও তার পরিবারের সূত্রে জানা যায়, পরিবারের একমাত্র ছেলে হওয়ায় সংসারের অভাব ঘোচাতে ১২ বছর বয়সে ফরহাদ রাজধানীতে গিয়ে দিনমজুরির কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে গাজীপুরে গিয়ে শ্রমিক হিসেবে যোগ দেন কসমেটিক্সের দোকানে। প্রায় দুই বছর আগে বাড়ি থেকে ধারদেনা করে ১ লাখ টাকা পুঁজি শুরু করেন জার্সির ব্যবসা। কিছুটা সচ্ছলতা ফেরে পরিবারে।
গত ঈদুল ফিতরে বাড়িতে ঈদ উদযাপন শেষে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ঢাকায় ফেরার পথে গাজীপুর ফ্লাইওভার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয় ফরহাদ। এতে ঘাড়ের হাড় ভেঙে যায় এবং রগ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নাভীর নিচ থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত অবশ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ঘাড় ও পায়ের অপারেশনসহ চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে প্রায় ১১ লাখ টাকা। নিজের জমানো অর্থ ও আত্মীয়-স্বজনদের থেকে ধারদেনা করে চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে নিঃস্ব তার পরিবার। এখন গত দেড় মাস ধরে অর্থের অভাবে ফরহাদের চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। ২৪ ঘণ্টা বিছানায় শুয়ে থাকার কারণে তার কোমরের নিচে পচন ধরেছে।
ফরহাদের মামাতো ভাই মো. ইব্রাহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি তখন ঢাকায় ছিলাম। ফরহাদ এক্সিডেন্ট হয়েছে এমন খবর পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে দেখি সে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে এবং ঘাড় ভেঙে গেছে।

শয্যাশায়ী ছেলের পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে নিরব ও মা মমতাজ বলেন, সংসারের অভাব দূর করতে ১২ বছর বয়সে ঢাকায় চলে যায় ফরহাদ। ওই কামাই (রোজগার) করে আমাদের খাওয়াতো। গত রমজানের ঈদে বাড়িতে এসে ফেরার পথে মারাত্মক এক্সিডেন্ট হয়। পরে তার চিকিৎসা করাতে ধারদেনা করে, বিভিন্ন লোকজনের সহযোগিতায় প্রায় ১১ লাখ টাকা ব্যয় করেছি। এখনও প্রায় আড়াই লাখ টাকা দেনা আছি। অর্থের অভাবে বাকি চিকিৎসা করাতে না পরে পোলারে দেড়মাস আগে ঢাকা থেকে বাড়িতে নিয়ে আসছি। ওর নাভীর নিচ থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত অবশ হয়ে আছে, কোমরের নিচে ঘা হয়েছে। বর্তমানে টাকার জন্য পোলার চিকিৎসা করাতে পারছি না।
অসুস্থ ফরহাদ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, একটা দুর্ঘটনা আমার জীবনটা এলোমেলো করে দিয়েছে। পরিবার ধারদেনা ও লোকজনের সহযোগিতায় ঘাড়ের অপারেশন করানোর পরে ঘাড় ভালো হয়েছে। কিন্তু নাভীর নিচ থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত আমার শরীরে কোনো অংশ আছে কিনা তা আমি অনুভব করতে পারি না। অন্যদের সহযোগিতা ছাড়া নড়াচড়া করতে পারি না। ২৪ ঘণ্টা শুয়ে থাকতে থাকতে কোমরের নিচে পচন ধরেছে। আমি আগের জীবনে ফিরতে চাই। ডাক্তার বলেছে বাকি চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। আমার সে চিকিৎসা করানোর মতো পরিবারের সামর্থ্য নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলমগীর ও আপ্পান পাটোয়ারী বলেন, ফরহাদের চিকিৎসা চালাতে গিয়ে পরিবারের সব শেষ। কিছুই অবশিষ্ট নেই। তারা গরিব মানুষ। আমরা চাই সে সুস্থ হয়ে সবার মাঝে ফিরে আসুক।
ভোলা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রজত শুভ্র সরকার বলেন, ফরহাদ সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জেনেছি। যেহেতু অন্যের সহযোগিতা ছাড়া সে নড়াচড়া করতে পারে না সেক্ষেত্রে হুইল চেয়ারের জন্য আবেদন করলে আমরা তা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারব।
ফরহাদের চিকিৎসায় সরকারের পাশাপাশি সমাজে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ফরহাদ তার পরিবার ও স্থানীয়রা। সবার সহযোগিতায় উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে ফরহাদ সুস্থ হয়ে ফের স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে বলেও প্রত্যাশা তাদের। সহযোগিতার জন্য ফরহাদের বাবার মোবাইল নম্বরে ০১৭২৮-৫৩৬৯৫৫ যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
খাইরুল ইসলাম/আরকে