বাগেরহাটে পিসি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতির ওপর হামলা

বাগেরহাটে সরকারি পিসি কলেজ ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সভাপতি বেল্লাল শেখের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। রোববার (১৯ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসের পালকিঘর এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
বেল্লাল শেখ পিসি কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি মোরেলগঞ্জ উপজেলার পঞ্চকরণে হলেও পড়াশোনার সুবাদে তিনি জেলা সদরের দশানী এলাকায় থাকেন।
শনিবার কেন্দ্রীয় ছাত্রদল বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয়। এতে বেল্লাল শেখকে সভাপতি এবং রেদওয়ান কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। একইসঙ্গে জেলার ৩০টি কলেজ ও মাদ্রাসা শাখায় ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও অনুমোদন দেওয়া হয়। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও দলীয় পর্যায়ে নানা অভিযোগ ও আলোচনা শুরু হয়।
এই নবগঠিত কমিটি ঘিরে বিরোধের জেরেই এক পক্ষ বেল্লাল শেখ ও তার সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বেল্লাল শেখ, কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আয়শা আক্তারসহ অন্তত তিনজন আহত হন। তবে হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি বেল্লাল।
স্থানীয় সূত্র জানায়, রোববার বেল্লাল শেখ ও তার অনুসারীরা কলেজের পালকিঘর সংলগ্ন পুকুরপাড়ে গেলে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপ তাদের ওপর হামলা চালায়। তারা বেল্লাল ও তার সঙ্গে থাকা অন্যদের মারধর করে।
বেল্লাল শেখ বলেন, আমরা নবগঠিত কমিটির সদস্যরা শিক্ষকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে আমাদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা হয়। তবে কারা এবং কী কারণে এই হামলা করেছে, সে বিষয়ে তিনি স্পষ্ট কিছু বলেননি। শুধু বলেন, হামলাকারীদের মধ্যে কয়েকজন নবগঠিত কমিটির সদস্যও ছিলেন, কিন্তু তিনি মানসিক চাপে থাকায় বিস্তারিত বলতে অপারগ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছয় শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হামলাকারীদের মধ্যে নবগঠিত কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহারিয়ার সামিরসহ আরও কয়েকজন ছিলেন। হামলার সময় কিছু শিক্ষার্থী মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করছিলেন। এ কারণে এক ছাত্রীর ফোন পুকুরে ফেলে দেওয়া হয় এবং তাকে বকাঝকা করে কয়েকজন।
তবে এ বিষয়ে শাহারিয়ার সামিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি দুই দিন ধরে অসুস্থ। কারা কী করেছে, তা আমি জানি না।
কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেদওয়ান কাদের বলেন, ঘটনার পর আমি কলেজে গিয়ে দোকানদার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা হামলার কথা বললেও কে বা কারা জড়িত, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি। বিষয়টি আমরা সাংগঠনিকভাবে আলোচনা করছি।
সরকারি পি.সি কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোসা. আয়শা সিদ্দিকা বলেন, যেখানে নিজেদের কর্মীরাই নিরাপদ নয়, সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে এটাই এখন বড় প্রশ্ন। ছাত্র রাজনীতি মানে নেতৃত্ব, আদর্শ আর ঐক্য। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে, নিজেদের লোকের হাতেই কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছে, যা শুধু লজ্জাজনক নয়, ভয়াবহও। সংগঠনের ভেতরে যারা ক্ষমতার দাপটে, ব্যক্তিস্বার্থে বা বাহিরের প্রভাব খাটিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করছে, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া উচিত নয়। ছাত্রদল যদি সত্যিই ছাত্রদের পাশে থাকতে চায়, তবে এমন ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি রাজনীতি করি ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে, অন্যায়ের পাশে নয়। সংগঠনের মধ্যে অন্যায়, অনিয়ম বা সহিংসতা চলতে থাকলে আমি এই পদে থাকার কোনো মানে দেখি না। প্রয়োজনে আমি পদত্যাগ করব, কিন্তু অন্যায়ের সঙ্গে আপস করব না।
বাগেরহাট সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহামুদ-উল-হাসান বলেন, এমন কোনো খবর পাইনি। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নবগঠিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে রোববার বিক্ষোভ মিছিল হয় শরণখোলা ডিগ্রি কলেজে। বিক্ষোভকারীরা নবগঠিত কমিটিকে ছাত্রলীগ সমর্থিত কমিটি বলে অভিযোগ তোলেন।
আরও পড়ুন
বাগেরহাটে ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িত এমন দুজনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে জেলা ছাত্রদলের কোনো কমিটি নেই। ছাত্রদল একটি বড় সংগঠন, অনেকেই পদ পেতে আগ্রহী। দীর্ঘদিন জেলা ও ইউনিট পর্যায়ের কমিটি না থাকায় নানা বিভাজন তৈরি হয়েছে। পিসি কলেজেই তিনটি গ্রুপ আছে। এটি জেলার সবচেয়ে পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী কলেজ। তবে এই কমিটির প্রধান পদে শহরের কেউ না থাকায় অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
বাগেরহাট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোল্লা আতিকুর রহমান রাসেল বলেন, চার-পাঁচ বছর পর কলেজ কমিটি হয়েছে। এখন বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে। সেগুলো সত্য হলে দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে। আর আজ কলেজ সভাপতি বেল্লালের ওপর যে হামলা হয়েছে, তাতে দলীয় কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক এবং বাইরের কেউ থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
শেখ আবু তালেব/এআরবি