মাগুরায় দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে ৯০ ফুটের তোরণ

মাগুরায় ব্যাপক উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী উৎসব। সোমবার (২৭ অক্টোবর) ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এ উৎসব চলবে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) পর্যন্ত। শতবর্ষী এই কাত্যায়নী পূজাকে ঘিরে পুরো শহরে এখন উৎসবের আমেজ।
জানা যায়, দুর্গাপূজার ঠিক একমাস পর দুর্গা প্রতিমার আদলেই প্রতিমা তৈরি করে প্রতিবছর কাত্যায়নী পূজা পালন করা হয়। মূলত, দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলেও মাগুরায় এক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম। মাগুরায় কাত্যায়নী পূজাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পালন করে আসছেন এ অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।
এবারের কাত্যায়নী উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে শহরের নতুন বাজার সেতুর ওপর নির্মিত প্রায় ৯০ ফুট উচ্চতার বর্ণিল তোরণ। এটি নির্মাণ করেছে নিজনান্দুয়ালী এলাকার নিতাই গৌর গোপাল সেবাশ্রম পূজা উদ্যাপন কমিটি।
আয়োজকদের দাবি, জেলায় এর আগে এত উঁচু তোরণ নির্মিত হয়নি। প্রায় ৩০ জন শিল্পী ও শ্রমিকের তিন সপ্তাহের পরিশ্রমে তৈরি এই তোরণ এখন শহরের মানুষের প্রধান আকর্ষণ।
আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক পাপাই শিকদার বলেন, বড় আকারের তোরণ আমাদের কাত্যায়নী পূজার ঐতিহ্য। গত ১০ বছর ধরে লাইট বোর্ডের তোরণ নির্মাণ করা হলেও এবার আমরা পুরোনো ঐতিহ্যে ফিরেছি। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এ তোরণটি।
খুলনার শিল্পী নিতাই বিশ্বাসের নকশায় তোরণটি তৈরি করেছে তরুণ ডেকোরেটর নামে স্থানীয় একটি ডেকোরেটর প্রতিষ্ঠান। বাঁশ, কাঠ, কর্কশিট ও নানা রঙের কাপড় দিয়ে নির্মিত এই তোরণটির উচ্চতা ৯০ ফুট এবং প্রস্থ ৩০ ফুট। কাঠামোয় ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ৫৫০টি বাঁশ।
ডেকোরেটর প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী তরুণ ভৌমিক বলেন, কাত্যায়নী পূজা মাগুরার অন্যতম প্রধান উৎসব। আমরা প্রতিবছর নতুন কিছু উপস্থাপনের চেষ্টা করি। এর আগে, ৭০ থেকে ৭৫ ফুট উচ্চতার তোরণ নির্মাণ করেছিলাম, কিন্তু এবার সেটি ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে।
শিল্পী নিতাই বিশ্বাস বলেন, এই তোরণের বিশেষত্ব এর উচ্চতা। দেশের অন্য কোথাও এমন তোরণ সচরাচর দেখা যায় না। জনবহুল সেতুর ওপর এমন নির্মাণ কাজ করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক দূর থেকেই এটি চোখে পড়ে।
প্রতিবছর কাত্যায়নী উৎসব উপলক্ষে মাগুরায় লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশ-বিদেশের মানুষ এই উৎসবে অংশ নেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে আরম্ভর পূর্ণ এই কাত্যায়নী উৎসব। এ উৎসব ঘিরে প্রতিবছর লাখো মানুষের ঢল নামে মাগুরায়। দেশের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশের ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয় পুরো শহর।
তাছিন জামান/এএমকে