মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপির প্রার্থীকে ‘চাঁদাবাজ’ বললেন রিটা রহমান

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ (সদর ও আংশিক সিটি) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় রিটা রহমানের কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। বিক্ষোভ শেষে সংবাদ সম্মেলনে দল মনোনীত প্রার্থী ‘চাঁদাবাজ’ বলে মন্তব্য করেন রিটা রহমান। এ সময় মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বুধবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে রংপুর মহানগরীতে মনোনয়নবঞ্চিত রিটা রহমানের পক্ষে তার কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি টাউন হল চত্বর থেকে বের হয়ে নগরীর সিটি বাজার পর্যন্ত প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় টাউন হল মাঠে গিয়ে শেষ হয়। এই বিক্ষোভে জেলা ও মহানগরসহ সদর উপজেলা বিএনপির পরিচিত কিংবা পদধারী কাউকে দেখা যায়নি।
এদিকে বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তীতে নগরীর রাধাবল্লভের নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে রিটা রহমান বলেন, রংপুরে বিএনপির রাজনীতিতে সব সময় আমার অংশগ্রহণ ছিল। নেতাকর্মীদের যে কোনো আপদে বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছি। বিএনপির জেলা ও বিভাগীয়সহ সব পর্যায়ের সমাবেশে আর্থিক ও নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ ছিল। নির্বাচন এলে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়। রিটা রহমান ভোট করে আর রংপুরে থাকে না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক হেনস্তার শিকার হয়ে ২০১৯ সালে দেশের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হই।

তিনি আরও বলেন, আমার সাথে কেউ সম্পৃক্ত থাকলে তাকে পরবর্তীতে কমিটিতে রাখা হয়নি। আগামীতে কমিটিতে রাখা হবে না বলে হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। যার কারণে অনেক নেতাকর্মী তার সাথে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকলেও পদ-পদবি হারানোর ভয়ে প্রকাশ্যে আসতে চায় না। আমাকেও কমিটির কোথাও রাখা হয়নি।
রিটা রহমান বলেন, আমি দেশে এবং দেশের বাইরে বিএনপির হয়ে কাজ করছি। আমার বাবা বিএনপির আমলে সিনিয়র মন্ত্রী ছিলেন। বিএনপির প্রতি টান থেকেই বাংলাদেশ পিপলস পার্টি বিলুপ্ত করে দিয়ে আমি বিএনপিতে ফিরে এসেছি। আমি রংপুরের বাসিন্দা, রংপুরের মানুষ হিসেবে বিএনপির মনোনয়ন আমার হক। এর আগে দুইবার মনোনয়ন পেয়েছিলাম। কিন্তু সে সময় তো মানুষ ভোট দিতে পারেননি। এবারে প্রত্যাশা করছি ভালো ভোট হবে। মানুষ ভোট দিতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, আমার থেকে যোগ্য কাউকে নমিনেশন দিলে আমি মেনে নিতাম। কিন্তু একজন চাঁদাবাজ, শহরের মানুষ যাকে চাঁদাবাজ হিসেবে চেনে। তাকে মনোনয়ন দিলে তো আমি মেনে নিতে পারি না। তাই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবকে অনুরোধ করব, মনোনয়নের ব্যাপারটা পুনরায় বিবেচনায় নিতে। কেননা এখনো সুযোগ রয়েছে। যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তা দলীয়ভাবে জানানো হয়েছে সম্ভাব্য তালিকা। এখনো পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।
রিটা রহমান বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলের মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদুমিয়ার কন্যা। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের মৃত্যুতে ২০১৯ সালে রংপুর-৩ শূন্য আসনের উপনির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের (পিপিবি) সভাপতি রিটা রহমানকে মনোনয়ন দিয়েছিল বিএনপি। ওই সময় নিজেদের দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। রিটা রহমানকে ধানের শীষ প্রতীকে ওই নির্বাচনে এরশাদপুত্র রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদের কাছে পরাজিত হন। এর আগে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী রংপুর-৩ আসন থেকে অংশ নিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রংপুর-৩ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু। তিনি বুধবার বিকেলে নগরীর শাপলা চত্বর, চামড়াপট্টি, এরশাদ মোড় ও কামারপাড়া এলাকায় গণসংযোগ করেন।
এ সময় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে রিটা রহমানের অভিযোগ প্রসঙ্গে সামসুজ্জামান সামু বলেন, রংপুরের মাটি ও মানুষ বলবে আমি ভালো না মন্দ, আমি খারাপ না ভালো। রংপুরের মানুষ আমার মূল্যায়ন করবে ইনশাআল্লাহ সামনের ইলেকশনে। রংপুরের মানুষ তো আমাকে চিনে, যদি কোনো ক্রটি পেয়ে থাকে আমাকে বললে আমি সেই ত্রুটিমুক্ত হবো। কিন্তু আমি জানি রংপুরের মানুষের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করিনি। আমি দলের কোনো নেতাকর্মীর ক্ষতি করিনি। আমি দলের যত দায়িত্ব তা সততার সাথে পালন করেছি। রংপুরের মানুষ আমার দ্বারা কোনো রকমের কোনো দিন হয়রানির শিকার হয়নি।
তিনি আরও বলেন, উনি (রিটা রহমান) রংপুরে থাকেন না। উনি বাহিরে থাকেন, এটা রংপুরের সব মানুষই জানেন। অতত্রব আমার বিরুদ্ধে বাহিরের কোনো মানুষ যদি অভিযোগ করে আমি মনে করি সেটার কোনো সত্যতা নেই। সেটা অসত্য। আমি বলব না মিথ্যা, বরং মানুষই বলবে মিথ্যা।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর