রায়ে খুশি হলেও কার্যকর নিয়ে শঙ্কায় শহীদ রিজভীর পরিবার

গণঅভ্যুত্থানে ঢাকার উত্তরায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হওয়া মাহমুদুল হাসান রিজভী (২০) নোয়াখালীর প্রথম শহীদ। মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর রিজভীর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি ফিরলেও কার্যকর হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
মাহমুদুল হাসান রিজভীর বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়া পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের চর কৈলাশ এলাকায়। তার বাবা-মা ও ভাই-বোন বসবাস করেন নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর বার্লিংটন এলাকায়। জামাল উদ্দিন ও ফরিদা ইয়াসমিন দম্পতির বড় ছেলে ছিরেন রিজভী। নানাবাড়ি হাতিয়া উপজেলার হরণী ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে। সেখানেই তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মাহমুদুল এসএসসি পাস করেন মাইজদীর পৌর কল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। তারপর লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রনিকস বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করেন। জুলাই মাসে ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ শুরু করেন মাহমুদুল। ২ জুলাই মা ফরিদা ইয়াসমিন তাকে মেসে তুলে দিয়ে আসেন। মেসে তিন সহপাঠীসহ থাকতেন মাহমুদুল।

রিজভীর মা ফরিদা ইয়াসমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বৈরাচার হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার হয়েছে ঠিকই, কিন্তু রায় কার্যকর নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি। তার প্রেতাত্মারা এখনও দেশে সক্রিয়—এটাই আমাদের ভয়। আমরা চাই তাকে দেশে এনে দ্রুতই এই রায় কার্যকর করা হোক।
রিজভীর বোন ফাইজা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভাই আমাকে ভীষণ আদর করতেন। আমি কিছু বললেই সঙ্গে সঙ্গে তা এনে দিতেন। আমার ছোট ছোট ইচ্ছে পূরণ করতে তিনি কখনোই ক্লান্ত হতেন না। আজ যখন ভাই নেই, তখন মনে হয়—এখন আমাকে কে এভাবে আদর করবে? ভাইয়ের কথা মনে পড়লেই ভেতরটা হুহু করে ওঠে, চোখে পানি চলে আসে। এই শূন্যতার কষ্ট কাউকে ঠিকভাবে বুঝিয়ে বলতে পারি না। মনে হয় সব কথাই যেন বুকের ভেতর আটকে থাকে।
ঘটনার দিনটি স্মরণ করে নোয়াখালী শহর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল খায়ের সোহেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় মেসের চার বন্ধুসহ আন্দোলনে যায় রিজভী। উত্তরা রাজলক্ষ্মী এলাকায় পৌঁছাতেই গুলির শব্দ শুরু হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রিজভীর মাথায় গুলি লাগে। তার মগজ ছিটকে পড়ে যায়। বন্ধুরা দ্রুত ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিলেও সেদিনই সে মারা যায়।
তিনি আরও বলেন, রায়ের খবর পেয়ে সাধারণ মানুষের মনে দীর্ঘদিন পর স্বস্তি ফিরেছে। অনেকে মনে করছে, ন্যায়বিচারের পথে এটি একটি বড় পদক্ষেপ। তবে সার্বিকভাবে মানুষের প্রত্যাশা আরও এক ধাপ এগিয়ে—প্রকৃত শান্তি তখনই আসবে, যেদিন এই রায় বাস্তবে কার্যকর হবে। জনগণের কথায় এখন একটাই দাবি স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। শেখ হাসিনাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায়ে নির্ধারিত দণ্ড কার্যকর করা হোক। কারণ তাদের বিশ্বাস, দোষীদের শাস্তি কার্যকর হলে দেশ প্রকৃত অর্থে ন্যায়বিচার ও স্থিতিশীলতার পথে এগোবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের যে দরজা খুলেছে, তা দেশের বহুদিনের প্রত্যাশাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখন প্রয়োজন রায়টি দ্রুত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কার্যকর করা, যাতে দেশে প্রকৃত অর্থে স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসনের পথে এগিয়ে যেতে পারে। জনগণ আজ পরিবর্তন চায়, শান্তি চায়—আর সেই শান্তি নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।
হাসিব আল আমিন/এএমকে