বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী দুই ভাইয়ের মধ্যে হবে মূল লড়াই

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কুড়িগ্রাম-৪ আসনে জমে উঠেছে ভিন্নধর্মী প্রতিদ্বন্দ্বিতা। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী থেকে প্রার্থী হয়েছেন আপন দুই ভাই। ভাইয়ের বিপরীতে ভাইয়ের এই লড়াই এখন পুরো এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
এদিকে প্রার্থী চূড়ান্তের পর বিএনপি ও জামায়াতের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা গেছে নতুন উদ্দীপনা। জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখনো কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন। তারা মাঠে প্রচার-প্রচারণায় তেমন জোর না দিলেও আওয়ামী লীগের ভোটভিত্তি কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী সুবিধা নেবেন। এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা।
চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর এই তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত কুড়িগ্রাম-৪ আসনে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী দুই ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনী মাঠে তৈরি হয়েছে ত্রিমুখী পরিস্থিতি। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় পার্টি যদি এখানে একক প্রার্থী দিতে পারে, তবে বিএনপি ও জামায়াতের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে এই আসনটি।
ভোটাররা বলছেন, এ আসনে জাতীয় পার্টি তাদের কৌশল হিসেবে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন নাও করতে পারে। সে ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে দেখা যেতে পারে দলটিকে।
এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন রৌমারী উপজেলার বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলহাজ আজিজুর রহমান। তিনি রৌমারী উপজেলার যাদুর চর ইউনিয়নের ধনার চর গ্রামে ১৯৪৮ সালে জন্ম গ্রহন করেন। তার বাবা মুনছুর আহাম্মেদ ১৯৬২ সালে মুসলিম লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৬৫ সালে এম এন এ নির্বাচিত হন। বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজিজুর রহমান দলটির সদস্য হিসেবে থাকলেও ২০১১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত রৌমারী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাস করেন। তার পেশা ব্যবসা ও কৃষি। বর্তমানে তিনি জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন।

একই আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর মনোনয়ন পেয়েছেন আজিজুর রহমানের আপন ছোট ভাই রৌমারী উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির মো. মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক। তিনি ১৯৫৯ সালের ১০ ডিসেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন এবং স্থানীয় একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৯০ সালে জামায়াতের সহযোগী সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এরপর তিনি ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত রৌমারী উপজেলা জামায়াতের আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ব্যাবসা ও কৃষি কাজের সাথে জড়িত।
জাতীয় পাটি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন- চিলমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রুকুনুজ্জামান শাহিন। তিনি উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের মন্ডলপাড়া গ্রামের লুৎফর রহমান মন্ডলের ছেলে। রুকুনুজ্জামান শাহীন জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী নেতা হলেও গত দুটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি চিলমারী সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যাপক হিসাবে চাকরি করেছিলেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এম কম পাস করেন। তিনি বর্তমানে ব্যবসার সাথে জড়িত। এবারও তৃণমূল পর্যায়ের জনপ্রিয় এ নেতা স্বতন্ত্র হিসেবে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
এ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী রৌমারী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক হাফিজুর রহমান। জন্ম সূত্রে হাফিজুর রহমান চিলমারীর অষ্টমীর চর ইউনিয়নের বাসিন্দা হলেও বর্তমানে রৌমারী উপজেলার যাদুর চর ইউনিয়নের কর্তিমারী গ্রামের বসবাস করছেন। তার বাবা ইমান আলী পেশায় কৃষক। তিনি ২৮ নভেম্বর ১৯৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৮ সালে রয়েল ইউনিভার্সিটি ঢাকা থেকে ইংরেজি বিভাগ থেকে এমএ পাস করেন। যাদুরচর মডেল ডিগ্রি কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে শিক্ষকতা করছেন।

বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আজিজুর রহমান বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে দলের পেছনে শ্রম দিয়েছি। এলাকার মানুষের সাথে কাজ করেছি। ২০১৮ সালে আমি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলাম। স্বৈরাচার সরকার তখন আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। সে সময় আমি মানুষের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই কাজ করার সুযোগ পাইনি। এবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, জনগণ আমাকে বিজয়ী করলে চিলমারী-রৌমারী যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য সেতু নির্মাণসহ এলাকার উন্নয়নে জন্য কাজ করবো।
জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাক বলেন, আমার বড় ভাই আজিজুর রহমান বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন। তাতে করে আমাকে পরাজিত করতে পারবে না। কেননা জামায়াতের জনপ্রিয়তা এখন অনেক বেড়েছে। দুই ভাই প্রার্থী হলেও নির্বাচনে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।
আরও পড়ুন
রৌমারী উপজেলার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম (৬০) বলেন, যে আমাদের এলাকায় উন্নয়নের জন্য কাজ করবে তাকেই আমরা ভোট দেব।
চিলমারী উপজেলার আসাদুল হক (৫০) বলেন, তিনটি উপজেলায় নদী ভাঙন ও রৌমারীর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা করা দরকার। আমরা চাই যে এমপি হবেন তারা যেন বিষয়টি গুরুত্ব দেন।
রাজিবপুর উপজেলার আব্দুল খালেক (৫০) বলেন, আমাদের আজ মাদকের ছোয়ায় যুব সমাজ ধংসের দিকে যাচ্ছে। মাদকমুক্ত রাজিবপুর চাই।
অন্যদিকে এ আসনে এনসিপি, এবি পার্টি, জাকের পার্টি, খেলাফত মজলিস ও গণঅধিকার পরিষদসহ অন্যান্য দলের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
কুড়িগ্রাম-৪ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭১১ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৯২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) ভোটার ৯ জন।
আরএআর