ফেলে দেওয়া কলাগাছ থেকে পুষ্টিকর গোখাদ্য

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের চরাঞ্চলে গোখাদ্য উৎপাদনে নতুন এক সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে ফেলে দেওয়া কলাগাছের কাণ্ড। বহুদিন ধরে যেসব কাণ্ড কৃষকের বাড়ির পাশে পচে নষ্ট হতো, এখন সেই অব্যবহৃত অংশ থেকেই তৈরি হচ্ছে গরুর জন্য উন্নতমানের খাদ্য। খরচ কম, পুষ্টিগুণ বেশি হওয়ায় এটি ইতোমধ্যে খামারিদের মধ্যে ভালো সাড়া ফেলেছে।
চর চরিতাবাড়ি গ্রামের আইয়ুব খান এ উদ্যোগের পথিকৃৎ। কৃষি উদ্ভাবিত প্রযুক্তির ব্যবহার করে তিনি বাড়ির উঠোনেই কলাগাছের কাণ্ড প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করছেন সাইলেজ ও হেলেজ—যা বড় খামারগুলোতে অনেক আগে ব্যবহৃত হলেও গ্রামে এই পদ্ধতিটি নতুন।
সরেজমিনে আইয়ুব খানের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, উঠানজুড়ে সারিবদ্ধভাবে শুকানো হচ্ছে কাটা কলাগাছের টুকরো। ঘরের ভেতরে চলছে যান্ত্রিকভাবে কাটাকাটির কাজ। পাশে স্ত্রী, মা এবং ছেলে—সবাই মিলে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

আইয়ুব খান বলেন, অল্প খরচে মানসম্মত খাদ্য তৈরি হচ্ছে। প্রতি কেজি হেলেজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করি। শুধু নিজের গরুই নয়, আশপাশের খামারিরা নিয়মিত নিয়ে যান। সংরক্ষণ সুবিধা থাকায় বন্যা মৌসুমে এটি আরও বেশি কাজে দেয়।
২০২২ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালনের (বাকৃবি) পশুবিজ্ঞান বিভাগের গবেষক দল কলাগাছের অতিরিক্ত বর্জ্যকে পুষ্টিকর খাদ্যে রূপান্তরের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে।
গবেষণায় দেখা যায়, এক টন কলা উৎপাদনে প্রায় দুই টন বর্জ্য তৈরি হয়। এই বর্জ্য পরিবেশে ফেলে রাখলে দূষণ বাড়ে। তাই সেই বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতেই নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়, যা এখন সুন্দরগঞ্জে বাস্তবায়ন করছেন আইয়ুব।

উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আইয়ুব খান বলেন, প্রথমে কলা গাছের কাণ্ড কেটে রোদে শুকিয়ে আর্দ্রতা কমানো হয়। এরপর গুড়, ভূষি ও লবণ মিশিয়ে বায়ুরোধী ড্রামে রাখা হয় ১–২ সপ্তাহ। গাজন শেষ হলে আবার শুকিয়ে তৈরি হয় হেলেজ, যা দীর্ঘদিন ভালো থাকে। এই প্রক্রিয়ায় ১০০ কেজি কাণ্ড থেকে গড়ে ৬০ কেজি সাইলেজ পাওয়া যায়।
স্থানীয় কৃষক সাজু মিয়া বলেন, গরুর জন্য এমন খাবার আগে দেখিনি। গরু খায় ভালো, তবে দাম একটু বেশি মনে হয়।
মাহিনুর বেগম নামে এক গৃহিণী বলেন, ঘ্রাণটা ভালো, গরু খেতে পছন্দ করে। কাছেই পাওয়া যায় বলে সুবিধাও হয়। অল্প করে কিনে গরুকে খাওয়াচ্ছি।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কুমার দে বলেন, হেলেজ আধুনিক খাদ্য প্রযুক্তির অংশ। যারা তৈরি করছেন তাদের আমরা উপাদানে খেসারির ডাল গুঁড়া ও ক্যালশিয়াম যোগ করার পরামর্শ দিয়েছি। এতে পুষ্টিগুণ আরও বাড়বে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কলাগাছের কাণ্ড প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি এই গোখাদ্য পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং গবাদিপশুর জন্য বেশ উপকারী। স্থানীয় পর্যায়ে যে উদ্যোক্তারা এটি তৈরি করছেন, তাদের উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে অনুমোদন মিললে এই খাদ্য আরও বড় পরিসরে উৎপাদন করা যাবে, ফলে কৃষক ও খামারিরা আরও বেশি উপকৃত হবেন।
রিপন আকন্দ/এএমকে