ডিবি হেফাজতে রিকশাচালকের মৃত্যুর অভিযোগ

সিরাজগঞ্জে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের হেফাজতে শাহাদাত হোসেন নামে এক সন্দেহভাজন আসামির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তবে পরিবারের দাবি করেছে, আটক হওয়ার পর রাতভর নির্যাতনের ফলে শুক্রবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে তার মৃত্যু হয়। নিহত শাহাদাত হোসেন (৪৫) সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের মৃত খলিল হোসেনের ছেলে। তিনি পেশায় একজন রিকশাচালক ছিলেন।
নিহতের পরিবারের দাবি, বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) রাতে ডিবি পুলিশ শাহাদাতকে আটক করে। এরপর তার পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। পাশাপাশি প্রশাসন বা মিডিয়াকে কিছু জানালে হুমকিও দেওয়া হয়। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের স্যাকমো কবির হোসেন বলেন, দুপুরে পাঁচ-ছয়জন পুলিশ সদস্য শাহাদাত হোসেন নামে একজনকে জরুরি বিভাগ দিয়ে আমাদের ওয়ার্ডে ভর্তি করান। ভর্তি করার ২০ মিনিট পরই তিনি মারা যান। তার শরীরে আঘাতের দাগ ও হাতের আঙুলে জখমের চিহ্ন দেখা গেছে।
নিহতের বড় ভাই জহুরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, শাহাদতকে ডিবি ধরে নেওয়ার পরে আমি সেই অফিসে যায়। আমার ভাইকে দেখতে দেওয়া তো পরের কথা গেটে পর্যন্ত ঢুকতেই দেয়নি। পরে রাত ৯টার দিকে আমাকে ও আমার ছোট ভাইয়ের বউকে উপরে তোলে। আমার ভাইকে দেখেই আমি ডিবিকে বলি, স্যার আমার ভাই কিন্তু বাঁচবে না। যে মারছেন, বাচঁবে না। অতএব, আমাকে দিয়ে দেন। আমি নিয়ে চিকিৎসা করি, মরলে তাও নিজেকে সবুর দিতে পারবো, ভাইয়ের চিকিৎসা করছি। এরপর ডিবি আমাকে বলে, এই সুমুন্দি চুপ। আমার ভাইয়ের বউ কিছু বলতে গেলে তাকেও বলছে, এই সালি চুপ। এ সময় তাদের হাতে বড় বড় লাঠি ছিল।
তিনি আরও বলেন, ডিবি আমাকে বলল, আমার ভাই নাকি অটোরিকশা চুরি করেছে। আমি জানতে চাইলাম বাদী কে জবাব দিল, বাদী কেউ না। পরে আমাকে নিচে নামিয়ে দিল। সারাদিন পার হলো। আসর নামাজের পর ডিবি বলল, ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। আমি বললাম, আমাদের গুষ্টি ধরে বেচলেও এত টাকা পাব না। এরপর বলল, মিডিয়া বা প্রশাসন যেন কিছু না জানে। আমি বললাম, কেউ জানবে না।
জহুরুল ইসলাম আরও বলেন, একপর্যায়ে ডিবি আমাকে জিজ্ঞেস করল, আমার ভাইয়ের কি হার্ট দুর্বল? সকালে তো ভাইকে দেখে বুঝেছিলাম তার অবস্থা খারাপ। তখনই বুঝলাম, সে আর বেঁচে নেই। পরে বলল, সদর হাসপাতালে মারা গেছে। নাজমুল নামে একজন ডিবি অফিসার ছিল।
জেলা গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিদ্দিকুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহাবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিবি হেফাজতে মৃত্যু এভাবে বলা যাবে না। কথাটি সঠিক নয়। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি একটি হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি ছিলেন। এসব বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। আগে থেকেই তার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিল। বিস্তারিত তদন্তের পর জানানো হবে।
নাজমুল হাসান/এআরবি